১০০ ডায়ালের ভার লাঘবের চেষ্টা করতে গিয়েই নাকি চাপ বেড়ে গিয়েছে ১১২-র। ফলে বিপদের সময়ে হাজারো চেষ্টা করেও এক বারে ফোন পাওয়া যাচ্ছে না হেল্পলাইন নম্বর ১১২-তে। অন্তত তেমনই দাবি কলকাতা পুলিশের। যদিও নাগরিকদের একটা বড় অংশ বলছেন, ‘‘এক বারে তো দূরের কথা, কখনওই পাওয়া যায় না ১১২ নম্বরটি।’’ তাঁদের অভিযোগ, সমস্যায় পড়লে কাউকে লুকিয়ে কোনও নম্বর বার করে ফোন করাই যেখানে ঝক্কির, সেখানে একের পর এক নম্বর ডায়াল করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি লোকসভার আলোচনায় ১১২ হেল্পলাইন নম্বরটি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। গণধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় গোটা দেশ যখন উত্তাল, সে সময়ে লোকসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বলা হয়, দেশের সার্বিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে একটি নম্বরেই সব ধরনের সাহায্যের ব্যবস্থা করতে চালু হয়েছিল ১১২ নম্বরটি। পুলিশ, দমকল, এমনকি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও ওই নম্বর থেকে সাহায্য পাওয়া যায়। তবে সব রাজ্য ১১২ চালু করলেও পশ্চিমবঙ্গ করতে সচেষ্ট হয়নি। ফলে এখানে সমস্যায় পড়লে কেউই ওই নম্বরে ফোন করে সুরাহা পাচ্ছেন না।
এর পরেই কলকাতার মতো শহরে ওই নম্বরটি চালু রয়েছে কি না, সেই বিতর্ক দেখা দেয়। বিতর্ক আরও বাড়ে খোদ পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার একটি টুইটার পোস্ট থেকে। সেখানে তিনি জানান, ‘কলকাতায় কেউ সমস্যায় পড়লে দ্রুত সাহায্যের জন্য ১০০, ১০৯০, ১০৯১ বা ১১২ নম্বরে ফোন করতে পারেন। দ্রুত পুলিশি সাহায্য মিলবে।’
কিন্তু তার পরেও ১১২ নম্বরে একাধিক বার ফোন করে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রতি বারই যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর বলেছে, ‘‘আপনি যে উপভোক্তাকে ডায়াল করেছেন, তিনি আপাতত কোনও কল ধরছেন না।’’ যদিও লালবাজার সূত্রের দাবি, গত পাঁচ দিনে রোজ গড়ে দেড়শোটি করে ফোন এসেছে ১১২ নম্বরে।
বিতর্ক বাড়তে থাকায় গত শুক্রবার যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, ১১২ নম্বরে আদতে প্রচুর ‘জাঙ্ক কল’ ঢুকে গিয়েছে। ফলে তাতে কখনও কখনও ফোন যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘আগে ১০০ নম্বরেও এমন প্রচুর জাঙ্ক কল আসত। দেশ জুড়ে চলতে থাকা ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং কেউ ফোন করে যাতে এক বারে পান, তাই ১০০ নম্বরের সব জাঙ্ক কল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেগুলিই ঢুকেছে ১১২ নম্বরে।’’ ওই আধিকারিক আরও বলেন, ‘‘অনেকেই একাধিক বার চেষ্টা করে ফোন পাচ্ছেন। ফলে ওই নম্বর যে একেবারে বন্ধ, সেটা বলা যায় না।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘যে নম্বরে সমস্যা হচ্ছে তাতে করবেন কেন? ১০০ নম্বরেই ফোন করুন, সহজে এবং দ্রুত সাহায্য মিলবে।’’
প্রথমে রাজ্যের অবস্থান ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার ১১২ নম্বরটি চালু করতে বললেও তারা ১০০ নম্বরই ব্যবহার করবে। পুলিশ মহলের অন্দরের অনুমান, অভিন্ন নম্বর হওয়ার কারণে ১১২-তে কোনও অভিযোগ জমা পড়লে সেটি কেন্দ্রীয় কোনও সার্ভারেও জমা হতে পারে। সে কারণেই প্রাথমিক ভাবে ১১২-তে আপত্তি ছিল রাজ্যের। কিন্তু কলকাতা পুলিশ সম্প্রতি ১১২ নম্বরটি প্রচার করায় অনেকে মনে করছেন, রাজ্য নিজের পুরনো অবস্থান থেকে সরে আসছে ধীরে ধীরে।