Mobile Thief

মিসড কলেই ব্যবসার সঙ্কেত বার্তা, মূক-বধির চোর ধরতে নাকাল পুলিশ

সম্প্রতি এক মোবাইল চোরকে ধরতে গিয়ে এই শীতেও ঘাম ছুটে গিয়েছে সেই কলকাতা পুলিশেরই।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

কলকাতা পুলিশ গর্ব করে বলে, ফোন হারিয়ে গেলে নিশ্চিত ভাবে তা খুঁজে বার করা হবে। ফোন চুরি করলেও রেহাই নেই। টাওয়ারের অবস্থান দেখে, ফোন থেকে হওয়া কথোপকথনের সূত্র ধরে ঠিক শনাক্ত করা হবে চোরকে। কিন্তু সম্প্রতি এক মোবাইল চোরকে ধরতে গিয়ে এই শীতেও ঘাম ছুটে গিয়েছে সেই কলকাতা পুলিশেরই। ভিন্‌ রাজ্য পর্যন্ত ধাওয়া করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ১০৪টি মোবাইল উদ্ধার করতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সে মূক ও বধির। তাই তাঁদের ব্রহ্মাস্ত্র ‘কল ডিটেলস রেকর্ড’ (সিডিআর) শুনে এগোনো সম্ভবই হয়নি। মূক ও বধির হওয়ায় অভিযুক্ত কাউকে ফোনই করত না। ফলে চিহ্নিত করা যেত না, তার চুরি করা ফোনের অবস্থান!

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৭ নভেম্বর। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিন একটি মোবাইলের দোকানের তরফে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ করা হয়, এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনের মধ্যে থাকা তাদের দোকান থেকে চুরি গিয়েছে ১০৪টি মোবাইল। তদন্তে নেমে পুলিশ স্টেশনের সিসি ক্যামেরা দেখে জানতে পারে, ১৬ তারিখ রাতে মেট্রো স্টেশনের গেট বন্ধ হওয়ার আগে কোনও এক সময়ে ওই দোকানে ঢুকেছিল চোর। সারা রাত সেখানেই অপেক্ষা করেছে সে। দোকানের মধ্যেই পোশাক বদলে একটি ঝোলায় মোবাইলগুলি ভরেছে। পরের দিন সকালে স্টেশনের গেট খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। এর পরে যাত্রীদের যাতায়াত শুরু হতেই সরে পড়েছে সে।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তদন্তকারীরা আরও দেখেন, স্টেশন থেকে বেরিয়ে ওই ব্যক্তি উল্টো দিকে উত্তরবঙ্গের বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছে। সেখানকার সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, টিকিট কাটার সময়ে মোবাইলে একটি ছবি বার করে দেখাচ্ছে সে। কিন্তু কেন মুখে কিছু না বলে মোবাইলে ছবি দেখাচ্ছে ওই ব্যক্তি, তা ভাবাতে শুরু করে পুলিশকে।

Advertisement

অভিযুক্তের খোঁজে এর পরে চুরি যাওয়া মোবাইলগুলি ট্র্যাকিংয়ে বসায় পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘কিছু দিনের মধ্যেই একটি মোবাইল ফোন মালদহে চালু হয়। এমন ক্ষেত্রে ওই মোবাইলে যে সিম কার্ডটি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটির টাওয়ার লোকেশন চেয়ে পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছে। অনেক সময়ে গ্রামের দিকে টাওয়ারের অবস্থান তত নিখুঁত ভাবে পুলিশকে দিতে পারে না সেই সংস্থা। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ফোনের কল ডিটেলস রেকর্ড (সিডিআর) শোনা হয়।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, এই ধরনের তদন্তে সিম কার্ডটি যাঁর নামে, সেই ব্যক্তিকে ‘এ’ ধরা হয়। তিনি যাঁকে ফোন করছেন তাঁকে ‘বি’ এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি যাঁকে ফোন করছেন তাঁকে ‘সি’ ধরা হয়। যাতে ‘এ’ কিছু জানতে না পারেন, তাই প্রথমে যাওয়া হয় ‘সি’-এর কাছে। এই ঘটনাটির ক্ষেত্রে সেখানেই বাধে বিপত্তি। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে কাউকেই চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। কারণ, চালু হওয়া মোবাইলটি থেকে কয়েক সেকেন্ডের মিস্‌ড কল দেওয়া হচ্ছিল। তাই টাওয়ারের অবস্থান পেলেও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।’’

তখন পুলিশ ভাবতে শুরু করে, কেন কলকাতায় উত্তরবঙ্গের বাসস্ট্যান্ডে টিকিট কাটার সময়ে মুখে কথা না বলে মোবাইলে ছবি দেখিয়েছিল চোর? তা হলে কি সে কথা বলতে পারে না? এই ভাবনা থেকেই এর পরে ওই মোবাইল থেকে আরও যাঁদের ফোন করা হয়েছে, তাঁদের খোঁজ শুরু হয়। তাতেই শেষমেশ জট খোলে রহস্যের।

যাঁদের ফোন করা হয়েছিল, তাঁদেরই এক জন পুলিশকে জানান, চোরাই মোবাইলগুলি রাখা আছে তাঁর জিম্মাতেই। মালদহ রেলওয়ে ব্যারাক কলোনির একটি পরিত্যক্ত ঘরে। ওই ব্যক্তির থেকেই পুলিশ জানতে পারে, চোরের নাম রুবেল। সে মূক ও বধির। চুরি করা ফোন থেকে সে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দু’-তিন বার মিস্‌ড কল দিত। অর্থাৎ, এ বার হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়ো কলে আসতে হবে। সেখানে সাঙ্কেতিক কথোপকথনে চলত চোরাই ফোন বিক্রির ব্যবসা। ফোনগুলি মালদহে রেখে গেলেও রুবেল এই রাজ্যে ছিল না। কলকাতা পুলিশের একটি দল উত্তরপ্রদেশের আলিগড় থেকে তাকে গ্রেফতার করে ৬ ডিসেম্বর। একাধিক দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পরে আপাতত সে পুলিশি হেফাজতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement