Kolkata Police

পুজো মিটতেই নিষ্ক্রিয় করা হল উদ্ধার হওয়া নিষিদ্ধ বাজি

কালীপুজো ও ছটপুজো কাটতেই এমন প্রায় ১৪ হাজার কেজি বাজি মঙ্গলবারই হলদিয়ায় নিয়ে গিয়ে পুলিশের তরফে নিষ্ক্রিয় করা হয়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

মজুত করা বাজি হঠাৎ ফেটে গেলে কী হতে পারে, তা দেখিয়েছে নৈহাটি এবং চুঁচুড়া। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তীব্র শব্দে কেঁপে উঠেছিল ওই দুই এলাকা। ছাদ ধসে পড়ে, চাল উড়ে গিয়ে এবং জানলার কাচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৫০০টি বাড়ি। শিশু-সহ আহত হন তিন জন! জানা যায়, উদ্ধার হওয়া বাজি এবং বাজি তৈরির মশলা এক জায়গায় রেখে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছিল পুলিশ। অসাবধানতায় ঘটে যায় বিপত্তি। শুধু নৈহাটি বা চুঁচুড়া নয়, চলতি বছরেই কালীপুজোর আগে উদ্ধার হওয়া বাজি ফেলে রাখায় বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বারুইপুর থানা। পুড়ে যায় বেশ কয়েকটি গাড়ি!

Advertisement

এই সমস্ত পুরনো অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই এ বার উদ্ধার হওয়া বাজি সুষ্ঠু ভাবে দ্রুত নিষ্ক্রিয় করতে তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশ। কালীপুজো ও ছটপুজো কাটতেই এমন প্রায় ১৪ হাজার কেজি বাজি মঙ্গলবারই হলদিয়ায় নিয়ে গিয়ে পুলিশের তরফে নিষ্ক্রিয় করা হয়। সূত্রের খবর, লালবাজারের অস্ত্র আইন বিভাগের অধীনে আটটি লরিতে ওই বাজি নিয়ে যাওয়া হয় হলদিয়ার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’-এর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেখানেই দিনভর চলে বাজি নিষ্ক্রিয় করার কাজ।

চলতি বছরে শুধুমাত্র কালীপুজোর দিনই উদ্ধার হয়েছে ১০২৬.৭৫ কেজি বাজি। দীপাবলি এবং তার পরের দিন মিলিয়ে উদ্ধার হওয়া বাজির পরিমাণ প্রায় ৮৯.৭ কেজি। ছটপুজোর দু’দিন মিলিয়ে মোট ২৬.৭ কেজি বাজি উদ্ধার করেছে পুলিশ। কালীপুজোর আগে নানা জায়গায় হানা দিয়ে উদ্ধার হওয়া বাজির পরিমাণ আরও প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেজি। যদিও এ দিন নিষ্ক্রিয় করা বাজির পরিমাণ তার চেয়ে অনেকটাই বেশি।

Advertisement

তবে, ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় এ বার উদ্ধার হওয়া বাজির পরিমাণ বেশ কিছুটা কম। পুলিশেরই পুরনো হিসাব বলছে, ২০২০ সালে কালীপুজোর আগের দিন পর্যন্ত শহরে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার কেজি বাজি। কালীপুজো ও ছটপুজোর দিন উদ্ধার হয় যথাক্রমে ১৬৩৭.০৫ এবং ১৩৪.৪ কেজি বাজি। তবে, ২০২১ সালে কালীপুজোর আগের ১০ দিনেই উদ্ধার হয়েছিল ৭৬৬৬.৩ কেজি বাজি। শুধুমাত্র কালীপুজোর দিনই উদ্ধার করা হয় ১৬৮৩.৮ কেজি বাজি। ওই বছরের ছটপুজো এবং দীপাবলিতে যথাক্রমে ২৭.৭ ও ২৩.৬০ কেজি বাজি উদ্ধার করা হয়েছিল।

কিন্তু পরিমাণে কম হলেও এ বার বাজি নিষ্ক্রিয় করার তৎপরতা দেখা গিয়েছে অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি। যা নিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘অতীতে এ নিয়ে একাধিক বিতর্ক হয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকেও পদ্ধতি মেনে সবটা দ্রুত করে ফেলার নির্দেশ এসেছিল।’’

কী সেই পদ্ধতি? এ দিন বাজি নিষ্ক্রিয় করার কাজে যাওয়া পুলিশ আধিকারিক এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, জমিতে কয়েকটি বিশাল প্লাস্টিকের জলাধার রাখা থাকে। ওই ফাঁকা জলাধারের মধ্যে প্রথমে লোহার পাটাতন পাতা হয়। পাটাতনের উপরে ঢালা হয় ইট, সুরকি, বালির মিশ্রণ। তার উপরে রাখা হয় বাজিগুলি। বাজির উপরে আর এক দফায় ওই মিশ্রণ ঢেলে জলাধারের মুখ আটকে মাটির গভীরে বসিয়ে দেওয়া হয়। মাটির নীচে ওই মিশ্রণ কয়েক বছর পরে বোল্ডারের আকার ধারণ করে।

কিন্তু পুলিশের এই সচেতন পদক্ষেপের পাশাপাশি রয়ে যাচ্ছে একটি আশঙ্কার বিষয়ও। বাহিনীর একাংশ জানাচ্ছেন, উদ্ধার না হওয়া বাজির সংখ্যাও অনেক। সেই সমস্ত বাজি এখন রাখা হবে কী ভাবে? বাজি ব্যবসায়ীরা এমন বাজি রাখার নিয়ম মানবেন তো? বিস্ফোরক আইন অনুযায়ী, এই ধরনের বাজি সেফ হাউসে রাখতে হয়। ওই সেফ হাউসগুলিকে ‘ম্যাগাজ়িন’ বলে। কয়েক বিঘা ফাঁকা জায়গায় ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার লম্বা এক-একটি ঘর বানিয়ে তৈরি হয় ম্যাগাজ়িন। ঘরের চার দিকে জলাশয় তৈরি করতে হয়। ঘরগুলি হতে হয় তাপ-নিরোধক। ছাদের নীচে কয়েক স্তর মোটা শেড দিয়ে তবেই বাজি রাখতে হয়। শর্ট সার্কিট বা অন্য বিপদ এড়াতে ঘরে আলোর ব্যবস্থা রাখা হয় না। সেখানে মোমবাতি নিয়ে প্রবেশও নিষিদ্ধ। ঘর্ষণজনিত বিপদ এড়াতে বাক্সের মধ্যে ভরে নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখতে হয় বাজি। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘ম্যাগাজ়িনে বাজি রাখতে কার্টনপিছু ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ পড়ে। যে জিনিস বিক্রি করে আয় করা যাচ্ছে না, সেটা ভাল ভাবে রাখতে কেউ এত টাকা খরচ করবেন কি?’’ উত্তর মিলছে না। আশঙ্কাও কাটছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement