ছবি এএফপি।
এখনই মালখানা উপচে পড়ছে। তাপে যে কোনও মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে এমন বাজিগুলিকে ওসিদের রাখতে হচ্ছে চোখে চোখে। ছটপুজোর পরে মালখানায় বাজি-ধারণের জায়গা না-ও থাকতে পারে জানিয়ে লালবাজারে চিঠি যাচ্ছে থানাগুলি থেকে। কিন্তু চাইলেও দুর্গা ও কালীপুজোয় শহরজুড়ে উদ্ধার হওয়া বাজিগুলির এখনই গতি করতে পারছে না পুলিশ। কারণ, বাজি ধরতেই সময় কেটে যাওয়ায় সেগুলি নষ্ট করার দিন ঠিক করার সময়ই পাচ্ছে না পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
কলকাতা পুলিশের অস্ত্র আইন বিভাগ সূত্রের খবর, বাজেয়াপ্ত করা বাজি প্রথমে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় জমা করে রাখা হয়। লালবাজারের বিভিন্ন শাখা যে নিষিদ্ধ বাজি আটক করে, সে সব থাকে লালবাজারেই। নির্দিষ্ট খাতা ধরে সংশ্লিষ্ট থানা বা লালবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বাজির হিসেব রাখতে হয়। এর পরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি দিন ঠিক করে থানাগুলি থেকে লালবাজারে সমস্ত বাজি আনানো হয়। এক আধিকারিক জানান, ওই দিনই বাজিগুলিকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে কলকাতার বাজি নষ্টের কাজ হচ্ছে হলদিয়ায়।
সেখানকার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের’ জমিতে কয়েকটি বিশাল প্লাস্টিকের জলাধারের ব্যবস্থা করা থাকে। ওই ফাঁকা জলাধারের মধ্যে প্রথমে লোহার পাটাতন পাতা হয়। এর পরে ওই পাটাতনের উপরে ইট, সুরকি, বালির মিশ্রণ ঢালা হয়। তার উপরে রাখা হয় বাজিগুলি। এর পরে বাজির উপরে আর এক ওই মিশ্রণ ঢেলে জলাধারের মুখ আটকে মাটির গভীরে বসিয়ে দেওয়া হয়। ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘পুড়িয়ে বা অন্য ভাবে বাজি নষ্টের চেষ্টা হলে তা থেকে দূষণ ছড়াতে পারে। তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কয়েক বছর পরে মাটির নীচে পোঁতা এই মিশ্রণ বোল্ডারের আকার ধারণ করে। সেগুলি তুলে বোল্ডার হিসেবেই ব্যবহার করা হয়।’’
তবে চলতি পুজোয় উদ্ধার হওয়া বাজিগুলিকে কত দিনে নষ্টের ব্যবস্থা করা যাবে সে ব্যাপারে অন্ধকারে সকলেই। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা কলকাতা পুলিশের সময় না হওয়া তো বটেই, এই দিন নির্ধারণ এখনও না হওয়ার পিছনে আরও একটি কারণ জানালেন লালবাজারের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘গত এক বছরে উদ্ধার হওয়া প্রায় ৬ হাজার কিলোগ্রাম বাজিই এত দিন পড়ে ছিল পুলিশের জিম্মায়। এ বছরেই ভোট হওয়ায় সেগুলির আগে গতি করা যায়নি। শেষে কালীপুজোয় থানাগুলো ভরে যাবে ভেবে গত ৯ অক্টোবর হলদিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বাজিগুলি। ক’দিন আগেই সেগুলি নষ্ট করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে যত বাজি জমে আছে, সেগুলি নষ্ট করার জন্য এখনই সময় পাওয়া যাচ্ছে না হলদিয়ার। এখন পুজো শেষেই নতুন ২ হাজার কিলোগ্রাম বাজি জমে গিয়েছে। ছট পুজোর শেষে সংখ্যা আরও বাড়বে।’’
থানার বাজি-মুক্তি কবে ঘটছে?
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান মুরলীধর শর্মা বললেন, ‘‘খুব দ্রুত করা হবে। তখন সকলকেই জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য-সচিব আইপিএস অফিসার রাজেশ কুমারও বলেন, ‘‘কবে করা যায় এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি।’’ সব দিক শুনে ডিসি উত্তরের অধীন একটি থানার তদন্তকারী আধিকারিক বললেন, ‘‘কিছু বাজি বাড়ির ছোটদের হাতে তুলে দিয়ে পুলিশ যে একটু হালকা হবে তারও জো নেই। বড় কর্তারা সব হিসেব নেবেন।’’