—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পুলিশের সিদ্ধান্ত বদল হল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। বাজি বাজার বসার আগেই বাজি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিল তারা। সূত্রের খবর, আগামী শুক্রবার থেকেই শহরে পুলিশের উদ্যোগে চারটি বৈধ বাজি বাজার বসতে চলেছে। ফলে সেখানে কোন বাজি বিক্রি হবে, কোনটি হবে না— সেই পরীক্ষাও পুলিশকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই করে ফেলতে হবে। এ নিয়ে বাজি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে শনিবার রাত থেকে। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, তড়িঘড়ি পরীক্ষা করে কাজ সারতে গিয়ে দায়সারা ব্যাপার হবে না তো? তাঁদের দাবি, এই পরীক্ষায় শব্দমাত্রা মাপার পাশাপাশি, যেন ধোঁয়া-দূষণ মাপারও ব্যবস্থা রাখা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা রবিবার বলেন, ‘‘বাজি পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে খবর দেওয়া হয়েছে। সব দিক থেকেই পরীক্ষা করা হবে।’’
এত দিন বেহালা, কালিকাপুর, টালা এবং ময়দান বাজি বাজারের উদ্যোগে পুলিশের অধীনে বৈধ বাজি বাজার হত কলকাতায়। তার আগে টালা পার্কে পরীক্ষা হয় বাজির। কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হওয়া এই বাজি বাজারে কী কী নিয়ম মানতে হবে, তা পুলিশের তরফে বৈঠক করে প্রতিবারই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। পরীক্ষা হওয়া বাজির মধ্যে যেগুলি পাশ করে, শুধুমাত্র সেগুলিই বিক্রি করার ছাড়পত্র থাকে বাজি বাজারে। এ বারও এ নিয়ে বৈঠক হয় পুলিশ এবং বাজি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কিন্তু সেখানেই বাজি বাজারে স্টল করার অবশ্য পালনীয় নিয়মাবলী বলে দেওয়ার পাশাপাশি জানিয়ে দেওয়া হয়, চলতি বছরে আর বাজির পরীক্ষা হবে না। যুক্তি হিসাবে জানানো হয়, যেহেতু এ বার গোটা দেশের মতো এই রাজ্যেও বাজির শব্দমাত্রা ১২৫ ডেসিবেলের মধ্যে রাখার নিয়ম হয়েছে, তাই আলাদা করে আর পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এর সঙ্গেই উল্লেখ করা হয়, এ বার শুধু সবুজ বাজিতেই ছাড় রয়েছে, ফলে এক্ষেত্রেও আলাদা করে আর পরীক্ষার দরকার নেই।
এর পরেই এ নিয়ে সরব হন পরিবেশকর্মীরা। ‘সবুজ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক তথা পরিবেশকর্মী নব দত্ত আগামী ২৪ অক্টোবর নাগরিক কনভেনশনের ডাক দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘বাইরে থেকে রাজ্যে বাজি ঢুকছে। সেটা যে ১২৫ ডেসিবেলের মধ্যেই রয়েছে, সেটা পরীক্ষা না করেই এ ভাবে ধরে নেওয়া যায় নাকি? সবুজ বাজির মোড়কে অন্য বেআইনি বাজি বিক্রি হলেই বা ধরা হবে কী করে?’’ অনেকেই দাবি করেন, এই পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে বাজি পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন!
যদিও গত বারের অভিজ্ঞতা মনে করে অনেকেই দাবি তুলেছেন, বাজির পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তা দায়সারা ভাবে নয়। গত বছর টালা পার্কে বাজির পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন না ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা নিরি-র কোনও প্রতিনিধি। অথচ তাদের দেওয়া ছাড়পত্র দেখেই চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করার কথা বাজির। পরীক্ষা করতে উপস্থিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা সেই কথা উল্লেখ করে জানিয়ে দেন, নিরি-র অ্যাপে এক একটি বাজির বাক্সের গায়ে লাগানো কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে। যে শংসাপত্র বেরোবে, তা যথাযথ কিনা, তা দেখে, সই করে ছাড়পত্র দেওয়ার অধিকারী একমাত্র নিরি-র আধিকারিকেরাই। কিন্তু নিরি-র কেউই উপস্থিত না থাকায় গত বছর তা করাই যায়নি। সেই সঙ্গে শব্দ মাপার যন্ত্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা নিয়ে এলেও, তাঁদের সঙ্গে ধোঁয়া পরীক্ষা করার কোনও বন্দোবস্ত দেখা যায়নি। চলতি বছরে তেমনটা যাতে আর না হয়, সেই দাবিও তুলেছেন বাজি ব্যবসায়ীদের অনেকেই। ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক তথা টালা বাজি বাজারের অন্যতম উদ্যোক্তা শুভঙ্কর মান্না বললেন, ‘‘পুলিশ নতুন করে বাজি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এ বার সেই মতোই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন থেকেও এ বার কড়া অবস্থান নেওয়া হয়েছে। সব দিক থেকেই পরীক্ষা হবে আশা করা যায়।’’