এটিএম থেকে কোনও গ্রাহক বেরোতে না বেরোতেই সেখানে ঢুকে পড়ছে দুই যুবক। কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে আসছে। আবার কোনও গ্রাহক ঢুকলেই পৌঁছে যাচ্ছে তারা। ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে তার পরেই।
এটিএমের ভিতরে ওই দুই যুবকের ঘনঘন যাতায়াত দেখেই সন্দেহ হয় এটিএমের বাইরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা ওই যুবকদের দিকে এগিয়ে যেতেই ভিড়ের মধ্যে এক জন উধাও হয়ে যায়। ধরা পড়ে দ্বিতীয় জন। তাকে জেরা করে পাকড়াও করা হয় আর এক জনকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুলিশ জানতে পারে, শহরে ফের সক্রিয় হয়েছে এটিএমের ‘গয়া গ্যাং’।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে ‘গয়া গ্যাং’-এর সদস্য ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার রাজাবাজারের একটি এটিএমের সামনে থেকে। ধৃতের নাম আমজাদ খান। তাকে জেরা করেই গ্রেফতার করা হয়েছে তার সঙ্গী আরশাদ খানকে। দু’জনের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের গয়ায়, কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরেই বৌবাজার এলাকায় থাকে। পুলিশের কাছে ধৃতদের দাবি, তারা বৌবাজারের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে।
লালবাজার সূত্রের খবর, ওই দুই যুবক আদতে গয়ার বাসিন্দা শুনেই আঁতকে উঠেছিলেন গোয়েন্দারা। কারণ, বছর কয়েক আগে গয়ার এমনই একটি দলের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির দাপটে নাজেহাল হতে হয়েছিল তাঁদের। তখন থেকে খাতায়-কলমে দুষ্কৃতীদের দলটি ‘গয়া গ্যাং’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তবে তখন পরপর কয়েক জন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যাওয়ায় তাদের দাপট অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তবে মাঝে মাঝে ওই গ্যাং-এর কায়দায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। গত বছরই ওই গ্যাং-এর কায়দায় যাদবপুরের এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে ৯ হাজার টাকা লোপাট হয়েছিল। ফের আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার এই ঘটনা সামনে আসায় গোয়েন্দারা মনে করছেন, সেই গয়া গ্যাং-ই ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
কী ভাবে ধরা পড়ল নতুন এই গয়া গ্যাং?
পুলিশ জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে মহম্মদ আক্রম নামে তপসিয়ার এক বাসিন্দা আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেন, তিনি রাজাবাজারের ওই এটিএমে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। এটিএম কার্ড ঢোকানোর পরে পিন দিয়ে তিনি ১০ হাজার টাকা তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার পরেই দেখেন ‘স্ক্রিনে’ দেখাচ্ছে, এটিএমটি কাজ করছে না। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরেই তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে, দশ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। পরে ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়েও তিনি জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। অথচ ওই অভিযোগকারীর দাবি, তিনি কোনও টাকা তোলেননি। তার পরেই তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের প্রথম দিকে ওই এটিএমের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখেও লাভ হয়নি। ফের বেশ কয়েক জন গ্রাহক ওই এটিএম ব্যবহার করে জালিয়াতির মুখে পড়েছেন বলে পুলিশের দ্বারস্থ হন। এর পরেই ওই এটিএমের উপরে নজরদারি শুরু করেন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ। বেশ কয়েক দিন নিষ্ক্রিয় থেকে ওই দুষ্কৃতীরা বুধবার ফের ওই এটিএমে হানা দেয়। তখনই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান আমজাদ ও আরশাদ। তবে কোনও টাকা উদ্ধার করা যায়নি বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। এ দিকে, আমহার্স্ট স্ট্রিটের ঘটনায় বৃহস্পতিবার ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হলে তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে আদালতে ধৃতদের আইনজীবী দাবি করেছেন, তাঁর মক্কেলরা নাবালক। পরবর্তী শুনানির দিন তাদের বয়সের প্রমাণ দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
কী ভাবে কাজ করে ওই গ্যাং?
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই গ্যাং-এর সদস্যেরা কোনও একটি এটিএম বেছে নিয়ে তার ‘কি-বোর্ড’-এর দু’টি বা তিনটি বোতামের মধ্যে আঠা জাতীয় কিছু লাগিয়ে দিত। গ্রাহক পিন দিতে ওই বোতাম ব্যবহার করলেই তা আটকে যেত। ফলে অকেজো হয়ে যেত যন্ত্রটি। গ্রাহক কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মেশিন খারাপ হয়ে গেছে ধরে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেই ওই গ্যাং-এর সদস্যেরা এটিএমে ঢুকে বোতামে লাগানো আঠা তুলে ফেলত। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘যন্ত্রটি সচল হলেই গ্রাহক যে পরিমাণ টাকার অঙ্ক ওই মেশিনে লিখেছিলেন, তা তুলে নিত দুষ্কৃতীরা।’’