বৃষ্টি মাথায় গন্তব্যের দিকে যাত্রা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ঘূর্ণিঝড় জ়ওয়াদ-এর প্রভাব শহরের উপরে তেমন পড়বে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সেই মতোই ঝড়ের বড়সড় প্রভাব দেখা গেল না। তবে ভারী বৃষ্টি না হলেও রবিবার সকাল থেকে সারাদিনই একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি দেখল শহর। রাতের দিকে বৃষ্টির বেগ অবশ্য বাড়ে। পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত শহরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ঠনঠনিয়ায়। যার পরিমাণ ২০.৪০ মিলিমিটার।
বড় দুর্যোগের আশঙ্কা না থাকলেও অবশ্য প্রস্তুত ছিল কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ। এর জন্য লালবাজারে খোলা হয়েছিল কন্ট্রোল রুম। পুরসভার প্রতিটি বিভাগকেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার এ দিন দীর্ঘক্ষণ পুরসভায় হাজির থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকার পুরসভার প্রস্তুতির পর্যালোচনা করেন। কথা বলেন কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সঙ্গে। কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় আধিকারিকেরাও প্রতিটি বরো এলাকা ধরে ধরে খোঁজখবর নিয়েছেন। পুর কমিশনার বলেন, ‘‘বড়সড় দুর্যোগ থেকে রেহাই মিললেও আমরা প্রস্তুতির কোনও খামতি রাখিনি। পুরসভার কন্ট্রোল রুম থেকে প্রতিটি বরো অফিসে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যে সমস্ত এলাকায় বৃষ্টিতে জল জমে, সেই এলাকায় বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত পাম্প মজুত করা হয়েছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, জোয়ারের জন্য এ দিন দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত গঙ্গা লাগোয়া লকগেটগুলি বন্ধ ছিল। পুর আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় জল জমা থেকে রক্ষা পেয়েছে শহর। কারণ লকগেটগুলি বন্ধ থাকার সময়ে বৃষ্টি হলে জমা জল গঙ্গায় গিয়ে পড়তে পারে না। পুরসভার নিকাশি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জোয়ারের সময়ে লকগেট বন্ধ থাকায় শহরে জল জমার সমস্যা চিরকালের। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী রাতে ভারী বৃষ্টি হলেও লকগেট খোলা থাকবে। তাই জল গঙ্গায় নেমেও যেতে পারবে।’’
এ দিন সকালের দিকে উত্তর কলকাতায় বিবেকানন্দ রোডে ও বেহালায় ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডের জগন্নাথ চৌধুরী রোডে দু’টি গাছ ভেঙে পড়ে। এর জেরে বিবেকানন্দ রোডের একাংশ বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ থাকে। তবে রবিবার হওয়ায় যানজটের তৈরির পরিস্থিতি হয়নি। পুরসভার উদ্যান বিভাগের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গাছ দু’টি কেটে সরিয়ে দেন।
রাতে ভারী বৃষ্টি হলে জল জমা আটকাতে এ দিন পুরসভার কমিশনার-সহ নিকাশি বিভাগের বিভাগীয় আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর বিদায়ী চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম। নিচু এলাকায় জল জমা রোধে পর্যাপ্ত পাম্প মজুত রাখার বিষয়েও আলোচনা হয়। ফিরহাদ বলেন, ‘‘আমি পুর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় কিছু বলতে পারি না। তবু শহরবাসীর স্বার্থে পুর আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। নিচু এলাকায় বাড়তি পাম্প মজুত রাখতে বলা হয়েছে। সিইএসসি-র সঙ্গে পুরসভার কর্মীরা সমন্বয়
রেখে চলেছেন।’’
পুর নির্বাচনে প্রার্থী হলেও দুর্যোগ মোকাবিলায় পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবর নিয়েছেন পুরসভার বিদায়ী প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার, তারক সিংহও। দেবাশিস কুমার জানান, গাছ ভেঙে পড়লে তা সরাতে প্রতিটি বরোয় উদ্যান বিভাগের বিশেষ দল তৈরি রয়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলে সিইএসসি-র কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। জ়ওয়াদ সতর্কতায় কলকাতা পুরসভার পাশাপাশি লালবাজারের কন্ট্রোল রুম চালু রাখা হয়েছে। সেখানে থাকছেন কলকাতা পুরসভা, দমকল, সিইএসসি-র আধিকারিকেরা। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘জ়ওয়াদ-এর জন্য রাজ্যের সব দমকলকেন্দ্রে নজর
রাখা হয়েছে। আমিও দমকলের ডিজি-র সঙ্গে কথা বলেছি। আপৎকালীন যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে প্রতিটি দমকলকেন্দ্রকে নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে।’’