শুভব্রত মজুমদার
বেহালায় মায়ের মৃতদেহ ফ্রিজারে রেখে দিয়ে তাঁর পেনশনের টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় ছেলে শুভব্রত মজুমদারের বিরুদ্ধে নিউ আলিপুর থানায় আগেই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তারা। এ বার সেই পেনশন-রহস্যের জট ছাড়াতে শুভব্রতকে জেরা করতে চলেছেন নিউ আলিপুর থানার তদন্তকারীরা। শুভব্রত এখন পাভলভ মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ। তাই চিকিৎসকদের অনুমতি নিয়ে এ সপ্তাহেই শুভব্রতকে জেরা করতে চায় পুলিশ।
মা বীণা মজুমদারের মৃত্যুর পরে তিন বছর ধরে শুভব্রত জালিয়াতি করে তাঁর পেনশনের টাকা তুলে গিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। বেহালার জেমস লং সরণির বাড়িতে বেআইনি ভাবে তিন বছর ধরে মায়ের দেহ ফ্রিজারে রেখে দেওয়ার অভিযোগে বেহালা থানা প্রথমেই তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। জামিনে মুক্ত শুভব্রতকে কোর্টের নির্দেশে পাভলভে পাঠানো হয়। মনোরোগ চিকিৎসকেরা সেখানে তাঁর চিকিৎসা করছেন।
মায়ের মৃত্যুর পরে এত দিন ধরে কী ভাবে শুভব্রত মায়ের পেনশনের টাকা তুলতেন, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই নিউ আলিপুরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। সপ্তাহ দুয়েক আগে ওই ব্যাঙ্কের সার্ভিস ম্যানেজার ডি পি গুহকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ। ওই সার্ভিস ম্যানেজার পুলিশকে জানিয়েছেন, শেষ তিন বছরে বীণাদেবী বলে পরিচয় দিয়ে এক বৃদ্ধা নিজেই সশরীরে ব্যাঙ্কে এসে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিয়ে পেনশন তুলতেন। তাই আসল বীণাদেবী যে মারা গিয়েছেন, ব্যাঙ্ক তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি। ব্যাঙ্কের তরফে সব রকম নিয়ম মেনেই বীণাদেবীর পেনশন দেওয়া হত বলে দাবি করেছেন ওই আধিকারিক।
ওই সার্ভিস ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই নড়েচ়়ড়ে বসে পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, আসল বীণাদেবীর মৃত্যুর পরে ব্যাঙ্কে এসে নিজেকে বীণাদেবী বলে দাবি করে কে ওই লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিলেন? যিনি বীণাদেবী সেজে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে এসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে আসল বীণাদেবীর ছবি কেন মেলালেন না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ? কেনই বা বীণাদেবীর সই মেলানো হল না? লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘শুভব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও ব্যাঙ্কের ওই শাখাও কিন্তু দায় এড়াতে পারে না। আমরা পুরোটাই খতিয়ে দেখছি।’’
গত ৫ এপ্রিল বেহালার জেমস লং সরণির বাড়ি থেকে বীণাদেবীর দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ঘরে ঢুকে হতবাক পুলিশ দেখেছিল, শুভব্রত মায়ের দেহ তিন বছর ধরে ফ্রিজারে রেখে দিয়েছেন। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথম থেকেই ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিল পুলিশ। পুলিশের তরফে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই নিউ আলিপুরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শুভব্রতের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় পেনশন সংক্রান্ত অভিযোগের দিকটি এ বার তদন্ত করে দেখবে নিউ আলিপুর থানা।