শুভব্রত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
কে জমা দিয়েছিল লাইফ সার্টিফিকেট, কাটছেই না ধন্দ।
মৃত্যুর পরে তিন বছর ধরে জমা পড়েছে পেনশনের টাকা। নিউ আলিপুরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা জানতেনই না যে তাঁদের শাখার গ্রাহক, বীণা মজুমদারের মৃত্যু হয়েছে। এমনকী, গত বছর বীণাদেবীকে ব্যাঙ্কে এসে লাইফ সার্টিফিকেটও জমা দিতে দেখেন ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা। বেহালার জেমস্ লং সরণিতে বৃদ্ধার দেহ তিন বছর ধরে ফ্রিজারে সংরক্ষণ করার ঘটনায় ওই ব্যাঙ্কের সার্ভিস ম্যানেজার পুলিশি জেরায় এমনই দাবি করেছেন।
কিন্তু তিন বছর আগে মৃত্যু হয়েছে যাঁর, তাঁর লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিল কে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। কেউ কি বীণা মজুমদার সেজে ব্যাঙ্কে এসেছিলেন, নাকি নিজেদের দায় এড়াতে এমন তথ্য দিচ্ছে ব্যাঙ্ক— তা নিয়েই এখনও ধন্দে পুলিশ। লাইফ সার্টিফিকেট জমা নেওয়ার সময়ে বীণাদেবীর ছবি ও স্বাক্ষর কি মিলিয়েছিল ব্যাঙ্ক? উত্তর নেই সে প্রশ্নেরও। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘জেরায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। বেশ কিছু অসঙ্গতি উঠে এসেছে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।’’ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কের সিসিটিভির ফুটেজও খতিয়ে দেখা হবে। ব্যাঙ্কের অন্য কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বেহালার ফ্রিজার-কাণ্ডের তদন্তে নেমে ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে প্রথম থেকেই অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই ধৃত শুভব্রত মজুমদারের মা বীণাদেবীর পেনশন সংক্রান্ত নথি চেয়ে তিন বার নোটিস দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্ককে। পুলিশের অভিযোগ, তৃতীয় নোটিস পাঠানোর পরেও ব্যাঙ্কের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি। মৃতা বীণাদেবীর নামে কী ভাবে তাঁর ছেলে শুভব্রত মজুমদার পেনশনের টাকা তিন বছর ধরে তুলছিলেন, সেই ধোঁয়াশা এখনও কাটল না। এই নিয়ে ব্যাঙ্কের তরফের গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে পুলিশের তরফে।
তবে বৃহস্পতিবার ওই ব্যাঙ্কের সার্ভিস ম্যানেজারকে জেরার পরে অন্য দিকে ঘুরেছে পুলিশের ভাবনার মোড়। এ বার আরও বড়সড় চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে পুলিশ। কে বীণাদেবী সেজে আসতেন ব্যাঙ্কে, তা জানতেই এখন নতুন ভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘শুভব্রত এখন পাভলভ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ব্যাপারে শুভব্রতকে জেরা করা হবে। প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের সার্ভিস ম্যানেজারের সঙ্গে বসিয়েও জেরা করা হবে তাঁকে।’’