সে দিনের সেই মুহূর্ত। - ফাইল চিত্র।
মেট্রোয় যুগলকে হেনস্থার ঘটনায় অবশেষে মামলা রুজু করে শুক্রবার তদন্তে নামল পুলিশ। তবে ওই ঘটনার জেরে যাঁরা অকারণ হেনস্থার মুখে পড়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীরা ফুল দিয়ে গাঁধীগিরির রাস্তা নেওয়ায় পুরো বিষয়টি চমকপ্রদ বাঁক নিয়েছে।
মেট্রো রেলে আলিঙ্গনাবদ্ধ তরুণ-তরুণীকে মারধরের প্রতিবাদে উত্তাল ফেসবুক-সহ নানা সোশ্যাল মিডিয়া। আর এই বিতর্কের ঝড়ের মুখে পড়ে গিয়েছেন কিছু সাধারণ মানুষ। গত সোমবার রাতের ঘটনাস্থলে যাঁরা ছিলেন না, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁরাও কুকথার শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থায় তেমনই এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাঁর বাড়িতে ফুল পৌঁছে দিলেন প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ।
সোমবার রাতে দমদমমুখী মেট্রোর কামরায় এক তরুণ-তরুণীকে আলিঙ্গনরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আপত্তি তোলেন কিছু সহযাত্রী। বচসার মধ্যে ট্রেন দমদমে পৌঁছলে ওই যুগলকে মারধর করা হয়। তা নিয়ে নিন্দার বন্যা বয়ে যায়। এক পক্ষ মারধরকে সমর্থন করছেন। এই সুযোগে কেউ বা কারা কয়েক জন প্রবীণের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে জানান, সোমবার মারধরের ঘটনায় তাঁরাই ছিলেন এবং তাঁরাই অভিযুক্ত। তাঁদের উদ্দেশে হুমকি ও কুকথায় ফেসবুক ভরে গিয়েছে। অথচ ওই ব্যক্তিরা ঘটনার সময়ে আদৌ ছিলেন কি না, কেউ নিশ্চিত নন।
আলিঙ্গনের পক্ষে থাকা আন্দোলনকারীরা এ দিন জানান, এটা মোটেই ঠিক হয়নি। যাঁরা সে-দিন সেখানে ছিলেন না, তাঁদের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার চক্রান্তের বিরোধিতা করছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন, পুলিশ যখন কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি, সেখানে কিসের ভিত্তিতে ওই ক’জনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে?
এক আন্দোলনকারী পড়ুয়া এ দিন বলেন, ‘‘ওই দিন ঘটনার সময়ে ছিলেন না, অথচ তাঁকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, এমন এক জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। এ দিন তাঁকেই ফুল দিয়ে গোটা ঘটনার বিরোধিতা করা হল।’’ এ দিন ওই পড়ুয়ারা যাঁর বাড়িতে যান, তাঁর নাম অতীশচন্দ্র ভাওয়াল। কোন্নগরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ইতিমধ্যেই উত্তরপাড়া থানা ও চন্দননগর কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ওই রাতে তিনি দমদমে ছিলেন না। তবু তাঁর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার যথেষ্ট বিব্রত। তাই পুলিশে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, কারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ভাবে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দমদম মেট্রো স্টেশনের সামনে গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করে বিক্ষোভ দেখান কিছু ছাত্রছাত্রী। তাঁরা স্টেশন ম্যানেজারকে স্মারকলিপি দেন। পরে সিঁথি থানায় অভিযোগ জানান মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। তার ভিত্তিতে এফআইআর করে পুলিশ। তাতে মারধর, জোর করে আটকে রাখা এবং হুমকির ধারা যুক্ত করে শুক্রবার তদন্তে নেমেছেন পুলিশকর্মীরা।
পুলিশি সূত্রের খবর, মেট্রোর নিগৃহীত তরুণ-তরুণী সামনে না-এলেও প্রাথমিক তদন্তে মারধরের কিছু প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তার পরেই এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনার দিন দমদম-সহ বেশ কিছু স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে মেট্রো-কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে। তবে মেট্রোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও মারধর স্পষ্ট ধরা প়ড়েনি।