শোভন চট্টোপাধ্যায় ও (ইনসেটে) রত্না চট্টোপাধ্যায়।
পারিবারিক কোন্দল পৌঁছে গেল ফুটপাথে!মেয়ে বিদেশে পড়তে যাবে। সেই ভিসা সংক্রান্ত কাগজপত্রে সই করছেন না মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই অভিযোগে শোভনের ফ্ল্যাটের সামনে রাতভর মেয়েকে নিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন মেয়র-পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়। গোটা ঘটনা নিয়ে থানায় অভিযোগ করলেন মেয়র। তার ভিত্তিতে গ্রেফতারও হলেন রত্না। পরে তিনি থানা থেকে জামিন পেয়ে যান।
বেশ কিছু দিন ধরেই শোভন গোলপার্কের কাছে সার্দান অ্যাভিনিউতে ফোর্ট লেজেন্ড নামে একটি আবাসনে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ রত্না বেশ কয়েক জনকে নিয়ে সেই আবাসনের সামনে ধর্নায় বসেন। এ দিন সকালে রবীন্দ্র সরোবর থানায় রত্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন শোভন।তাঁর অভিযোগ, রত্না গভীর রাতে কয়েক জনকে নিয়ে এসে তাঁর বাড়ির সামনে জমায়েত করেন। বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন। দলবল নিয়ে বাড়ি ঘেরাও করা, জোর করে সেখানে ঢোকার চেষ্টার পাশাপাশি শোভনকে হুমকিও দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে আরও লেখা হয়, শোভনকে যাতে কোনও ভাবে বিরক্ত না করা হয়, সে বিষয়ে রত্না চট্টোপাধ্যায়কে নির্দেশ দিয়েছিল আলিপুর আদালত। কিন্তু, সেই নির্দেশ অমান্য করে বাড়ির সামনে দলবল নিয়ে অবৈধ ভাবে জমায়েত করেন রত্না।
রত্নার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে শোভন বলেন, ‘‘রাত ১টার সময় ওঁর এখানে কী কাজ থাকতে পারে? কী সই করানোর থাকতে পারে?’’তিনি জানান, সই করতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য তিনি সই করতে রাজি। কিন্তু,অসত্য তথ্য জানিয়ে তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন রত্না। এমনটাই অভিযোগ শোভনের। পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমি কি বাচ্চা ছেলে! যা বলবে তাতেই সই করে দেব!’’
মেয়র-পত্নী কী বললেন, দেখুন ভিডিয়ো
আরও পড়ুন: রাতভর ধর্নায় বসে গ্রেফতার মেয়র-পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়, পরে জামিন পেয়ে যান
আরও পড়ুন: গড়িয়ায় ট্যারেন্টুলা! কামড় খেয়ে হাসপাতালে গৃহবধূ
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগপত্র। —নিজস্ব চিত্র।
অন্য দিকে রত্নার অভিযোগ, গত ১৯ মে থেকে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য নানা রকম চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। প্রয়োজন ছিল মেয়ের ভিসার জন্য একটা সই। সেই সই পেলেই মেয়ে জার্মানি যেতে পারবে। এত চেষ্টা সত্ত্বেও শোভন বিষয়টা নাকি গুরুত্বই দিতে চাননি। কোনও উপায় না দেখে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাই তিনি গোলপার্কের আবাসনের সামনে মেয়ে সুহানাকে নিয়ে ধর্নায় বসেন। এই ঘটনা যখন ঘটছে, সে সময় বাড়িতেই ছিলেন শোভন। রত্নার অভিযোগ, মেয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে। কিন্তু আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে যেতে বাধা দেয়। ফোনেও বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সুহানা। তাতেও নাকি কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি মেয়রের কাছ থেকে। মেয়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টাও করেননি শোভন।সুহানা বলেন, “আমার বন্ধুরা বিদেশে যাচ্ছে। কিন্তু বাবার সই না পাওয়ার জন্য আমার ভবিষ্যত্ অনিশ্চিত হয়ে যাবে।”
রত্না চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগপত্র। —নিজস্ব চিত্র।
রত্নার দাবি, শেষমেশ নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে সই করানোর বার্তা পাঠানো হয় শোভনের কাছে। তাতেও কোনও লাভ হয়নি। আদালতের নির্দেশ ছিল মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য কোনও সই-সাবুদের দরকার হলে মেয়র যেন তাতে আপত্তি না করেন। রত্নার প্রশ্ন, আদালতের নির্দেশের পরেও কেন সই করতে চাইছেন না শোভন। তাঁদের মধ্যে ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মেয়রের সই করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
তাঁর বিরুদ্ধে এ দিন যে অভিযোগ করেছেন শোভন তা সম্পূর্ণ নস্যাত্ করে দিয়েছেন রত্না। তিনি বলেন, “আমি কোথাও কোনও অন্যায় কাজ করিনি।’’