গ্রিন সিটি প্রকল্পে বরাদ্দের সিংহভাগই ফেরত যাচ্ছে রাজ্য সরকারের ঘরে। কারণ প্রকল্পের বরাদ্দ বিপুল টাকা ব্যবহারই করতে পারেনি কলকাতা পুরসভা।
অথচ গ্রিন সিটি মিশন প্রকল্প থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে পুরসভাকে অনুমোদন করেছিল রাজ্য সরকার। বছর শেষের হিসেবে দেখা গিয়েছে, তার সিংহভাগ টাকা ব্যবহার করতে পারেনি কলকাতা পুরসভার নিকাশি, পার্ক ও উদ্যান ও আলো দফতর। নিকাশির জন্য ১০০ কোটি, আলোয় ১১০ কোটি এবং পার্ক ও উদ্যানের জন্য ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। অব্যবহৃত টাকা তাই ফেরত যাচ্ছে সরকারের অর্থ দফতরে। পুর কর্তাদের মতে, ওই টাকা খরচ করলে গ্রিন সিটির পথে শহরকে অনেকটা এগিয়ে নেওয়া যেত।
কেন তা হল না? বিভিন্ন দফতরের ব্যাখ্যা বিভিন্ন। পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরের আধিকারিকেরা জানান, নতুন পার্ক করতে, পার্ক সাজিয়ে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে টাকা দেওয়া হয়েছিল। যার ১০ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছেন তাঁরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, গত কয়েক মাস ধরে জিএসটির জট এবং দরপত্র নিয়ে রাজ্য অর্থ দফতরের এক নির্দেশে কাজ শেষ করা যায়নি।
বলা হয়েছিল, রাস্তা এবং গলির আলো বদলে এলইডি বাতি লাগাতে হবে। কারণ অন্য আলোয় পরিবেশে বাড়ছে কার্বনের পরিমাণ। অথচ শহরকে এলইডি আলোয় ভরিয়ে তুলতে বরাদ্দের ২৫ শতাংশও খরচ হয়নি। পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, এলইডি আলো কেনার বিষয়ে পুরসভার ঢিলেমি দেরির অন্যতম কারণ। তবে আগামী বছর ফের টাকা মিলবে বলে দাবি তাঁর।
নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ অবশ্য এ জন্য ঠিকাদারদের কাজের অনীহা এবং কিছু সরকারি নির্দেশিকাকে বাধা বলে মনে করছেন। তিনি জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছিল গল্ফগ্রিনে নিকাশি পাম্পিং স্টেশন এবং নিকাশির কাজে আধুনিক যন্ত্র এবং গাড়ি কেনা হবে। ৩৫ কোটি টাকা খরচের কথা ছিল গল্ফগ্রিনের ওই কাজে। দু-দু’বার দরপত্র ডেকেও এক জনের বেশি ঠিকাদার মেলেনি। তৃতীয় বার দু’জনকে পাওয়া গেলেও সরকারের কিছু নীতির কারণে এখনও সে কাজ শুরু হয়নি। নিকাশির বর্জ্য তুলতে কেন গাড়ি কেনা হয়নি? তারকবাবু বলেন, ‘‘এ জন্য সরকারের শর্ত, বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ পাঁচ বছর ধরে করতে হবে বরাত পাওয়া সংস্থাকেই। কিন্তু কোনও সংস্থা তিন বছরের বেশি কাজ করতে আগ্রহী নয়। সে কথা সরকারকে জানানো হয়েছে।’’
যদিও এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। এই সব ব্যাখ্যা মানতে নারাজ পুরসভার একাধিক আধিকারিক। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক নেতাদের অপরিকল্পিত ভাবে টাকা চাওয়ার প্রবণতা কমাতে হবে। কী করা হবে, তার পরিকল্পনা এবং রিপোর্ট করে তবেই টাকা নেওয়া দরকার। তা না হলে এমনটা বারবার হবে।