মধ্য কলকাতার ঘিঞ্জি গলি। সেখানেই এখন সাজো সাজো রব! দেওয়ালে পোস্টার পড়েছে, গ্রীষ্মের দুপুরে হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে ব্যানার।
গলি ক্রিকেট শহরে নতুন নয়। কিন্তু ডামজেন লেনের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় এ বার ‘মানবতার’ ডাক। উদ্যোক্তারা বলছেন, কলকাতা এবং রাজ্যে অশান্তি লেগেই আছে। কোথাও রয়েছে রাজনীতির গাঢ় রং, কোথাও বা মানুষ-মানুষে ভেদাভেদ তুঙ্গে। এ সব কিছুকে সরিয়ে একজোট হতে তাঁরা তাই বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটকে। নাম দিয়েছেন, ‘হিউম্যানিটি কাপ’।
মধ্য কলকাতার এই অঞ্চলটি আক্ষরিক অর্থেই কসমোপলিটন। বাঙালি, অবাঙালি, চিনে— সবাই মিলেমিশে থাকে। দুর্গাপুজো, ইদ, বড়দিন কিংবা চিনে নববর্ষে আনন্দে মাততে কোনও বিশেষ পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না। ‘‘এই একতাকে তুলে ধরতেই ক্রিকেটের আয়োজন। ময়দানে আমাদের পরিচয় একটাই, খেলোয়াড়।’’— বলছিলেন আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা মহম্মদ আদিল।
ভরদুপুরে গলিতে দাঁড়িয়ে খেলার প্রস্তুতির তদারকি করছিলেন কামরান, হর্ষজিৎ, কেভিনের মতো এক দল তরুণ। শনিবার বিকেলে প্রতিযোগিতা শুরু। সে দিন ভোরের আলো ফোটার আগেই সব সেরে ফেলতে হবে। কালো পিচের রাস্তায় সবুজ রং করে তৈরি হবে পিচ। রাতের খেলায় জ্বলবে হ্যালোজেন। আলাদা আলাদা জার্সি পরে নেমে পড়বেন খেলোয়াড়েরা। এই প্রতিযোগিতা নিয়ে উৎসাহী স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদের অনেকেই বলছিলেন, গোলমাল থেকে দূরে সরে ছেলেগুলো যদি খেলা নিয়ে মেতে থাকে তো ক্ষতি কী?
পাড়ার গুরুজনদের উৎসাহ কতটা সেটাই জানাচ্ছিলেন আয়োজক কমিটির সভাপতি মহম্মদ ইমরান। বলছিলেন, ‘‘এক বার বলের আঘাতে পাড়ার একটি বাড়ির আলো ভেঙে গিয়েছিল। দাম দিতে চাওয়ায় কী জোরে চড় খেয়েছিলাম!’’
কামরান, হর্ষজিৎ, কেভিনেরা শুনেছেন, রাজ্য-সহ দেশের নানা প্রান্তে কত রকমের গোলমাল চলছে। কিন্তু সে সবে মাথাব্যথা নেই তাঁদের। জানালেন, রাজনীতির রং এই প্রতিযোগিতায় লাগতে দেননি। সব দলের সমর্থকদের কাছেই দ্বার খোলা রেখেছেন। নিমন্ত্রণ পৌঁছেছে কাউন্সিলর, বিধায়ক, পুলিশকর্তা— সকলের কাছেই। প্রতিযোগিতার খরচ জোগায় কে? উদ্যোক্তারা জানান, পরিচিত ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি সবার কাছেই সাহায্য চাওয়া হয়। যে যেমন পারেন দেন, বাকিটা নিজেদের পকেট থেকে দেওয়া হয়। ‘‘আর্থিক সাহায্য না পেলেও ব্যাট, বল, উইকেটের এই উৎসব বন্ধ হবে না।’’— বলছেন উদ্যোক্তারা।