প্রতীকী ছবি।
ওরাও ট্রেনের নিত্যযাত্রী। তবে, দিনের ট্রেনের নয়। রাতের শেষ ট্রেনে চেপে ওরা কলকাতায় আসে। কাজ সেরে ভোরের প্রথম ট্রেন ধরে ফিরে যায়।
কী কাজ ওদের? পুলিশের অভিযোগ, শিয়ালদহ এলাকায় বেশ কয়েক মাস ধরে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ চুরির যে সব ঘটনা ঘটেছে, তার অধিকাংশতেই ওরা জড়িত।
এমনই চার ‘নিত্যযাত্রী’কে শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে পাকড়াও করে এনেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ধৃতদের নাম ইসারুল মোড়ল, জাইরুল লস্কর, আনসার লস্কর এবং সলমন গাজি। মুচিপাড়া থানা এলাকায় বেশ কিছু মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় তারা জড়িত বলে পুলিশ জানায়। শনিবার তাদের আদালতে হাজির করানো হলে ধৃতদের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত নিজেদের হেফাজতে রেখে জেরা করার আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কী করে এই নিত্যযাত্রী চোরদের হদিস পেলেন গোয়েন্দারা?
পুলিশ জানায়, ২২ মার্চ রাতে নিউ মার্কেট এলাকায় এন্টালির বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার বাড়িতে চুরি হয়। কয়েক জন দুষ্কৃতী বিধায়কের বাড়িতে হানা দিয়ে একটি দামি ক্যামেরা ও একটি ল্যাপটপ চুরি করে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গোয়েন্দারা ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে বসির আলি খাঁ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেন। তাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করেন তাঁরা। লালবাজারের গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেরার মুখে বসির জানায়, সে বিধায়কের বাড়ি থেকে ক্যামেরা, ল্যাপটপ নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার পাড়ায় এমন আরও অনেকে রয়েছে যারা রোজ কলকাতায় মোবাইল চুরি করতে আসে। তাকে ধরা হলে অন্যরা ছাড়া পাবে কেন, সেই প্রশ্নও তোলে সে।’’
বসিরের কথা শুনে চোখ কপালে ওঠে গোয়েন্দাদের। কারা মোবাইল চুরি করতে আসে সেই প্রশ্ন করায় বসির ইসারুলের নাম বলে। বসির এ-ও জানায়, মোবাইল ফোন ছাড়াও ল্যাপটপ চুরিতেও ইসারুল ওস্তাদ। চুরি করার সময়ে ইসারুলের সঙ্গে আরও কে কে থাকে, সেই কথাও গোয়েন্দাদের জানিয়ে দেয় বসির। এর পরেই শুক্রবার রাতে ঘুটিয়ারি শরিফে অভিযান চালান গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দারা জানান, জেরায় ইসারুল ও তার সঙ্গীরা জানিয়েছে, রাতের শেষ ট্রেন ধরে শিয়ালদহে নামত তারা। কিছু ক্ষণ স্টেশন চত্বরে ঘোরাঘুরি করে মুচিপাড়া, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বউবাজার, ক্রিক রো-সহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যেত। একতলা বাড়ির জানালা খোলা পেলে উঁকি মেরে দেখে নিত মোবাইলন বা ল্যাপটপ আছে কি না। থাকলে আঁকশি দিয়ে বা হাত বাড়িয়ে সেগুলি তুলে নিত।ফুটপাথে শুয়ে থাকা মালবাহকদের পকেট বা বালিশ হাতড়েও মোবাইল চুরি করত তারা। কাজ সেরে ভোরের প্রথম ট্রেন ধরে তারা ফিরে যেত বাড়িতে।