তার পরে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও দুষ্কৃতীরা এখনও অধরা। আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরোতেও ভয় পাচ্ছেন আঠাশ বছরের ওই তরুণী।
ভর সন্ধ্যায় ব্লেড নিয়ে এক তরুণীকে আক্রমণ করে পালিয়ে গেল দুই আততায়ী। অভিযোগের তির ওই তরুণীরই প্রাক্তন প্রেমিক সৌম্য ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। যিনি সম্প্রতি শর্তাধীন জামিনে মুক্ত বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সোমবার, পর্ণশ্রী থানা এলাকার ঘটনা। তার পরে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও দুষ্কৃতীরা এখনও অধরা। আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরোতেও ভয় পাচ্ছেন আঠাশ বছরের ওই তরুণী।
ওই তরুণী জানান, সন্ধ্যায় পেটুলি পাড়া এলাকায় পড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। আচমকা একটি মোটরবাইক তাঁর পাশ দিয়ে জোরে বেরিয়ে যায় এবং তখনই তিনি অনুভব করেন মোটরবাইক আরোহী তাঁর বাঁ হাতে ধারাল কিছু চালিয়ে দিয়েছে। পালানোর সময়ে সৌম্য ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে যায় তারা।
তরুণী জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের শেষ দিতে তাঁর সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় সৌম্য ভট্টাচার্য নামে ওই যুবকের। তিনি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বলে জানিয়েছিলেন। এর পর তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কথাও হয়। দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও তৈরি হয়েছিল বলে দাবি ওই তরুণীর। দুই পরিবারের মধ্যে কথাও হয়। তরুণী জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিয়ের কথা হলে সৌম্যর পরিবার জানিয়েছিল, ছেলে সবে নতুন সংস্থায় চাকরিতে ঢুকেছে। এক-দেড় বছর পরে বিয়ে হোক।
তরুণী ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের কথা হওয়ার পরেই সৌম্যর আচরণে পরিবর্তন আসে। তরুণীর কথায়, ‘‘আমায় এড়িয়ে যেত সৌম্য। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপেও ব্লক করে দেয়। এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে জানায়, আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি। যেখানে খুশি যেতে পারি। যা করার করে নিতে পারি!’’
এর পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পর্ণশ্রী থানায় সৌম্যর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস ও প্রতারণার অভিযোগ জানান তরুণী। পুলিশ সৌম্যকে গ্রেফতার করে। মার্চে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান তিনি। অভিযোগ, এর পরেই সৌম্যর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নিতে তিন বার হুমকি দেওয়া হয় তরুণীকে। প্রতি বারই বলা হয়, ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপের যে কথাবার্তা তিনি প্রমাণ হিসাবে পুলিশকে দিয়েছেন, তা তাঁরা উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রমাণ না থাকলে পুলিশ কিছু করতে পারবে না। কিন্তু ফল ভুগতে হবে ওই তরুণীকে।
তরুণী জানিয়েছেন, তিনি একটি স্কুলে পড়াতেন। কিন্তু গত অগস্ট মাসে সম্পর্কের টানাপোড়েনে সেই চাকরিও ছেড়ে দেন। তরুণীর দাবি, ‘‘সোমবার ঘটনার সময় জায়গাটা নির্জন ও অন্ধকার ছিল। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরে বুঝতে পারি হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে।’’ ভয় পেয়ে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চলে যান তরুণী। কিন্তু অভিযোগ, তিনি পুরোটা জানালেও হাসপাতাল তাঁকে চিকিৎসা না করে আগে পুলিশের কাছে যেতে বলে। এর পরে তরুণী বাড়ি ফিরে মাকে নিয়ে পর্ণশ্রী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ লিখিত বয়ান নিয়েই ছেড়ে দেয়। কোনও এফআইআর নেয়নি।