বাড়ি থেকে অফিসে আসার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা পুলিশের ওয়্যারলেস বিভাগের সার্জেন্ট রাকেশ কুন্ডুর। বৃহস্পতিবার ভোরে চাকদহের কাছে সেই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার। ডিসি (ওয়্যারলেস) বিশ্বজিৎ ঘোষের জারি করা একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বা়ড়ি থেকে অফিসে যাতায়াতের পথে মোটরবাইক যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই উচিত পুলিশকর্মীদের। তার বদলে ট্রেনে বা বাসে চাপতে বলা হয়েছে অফিসারদের।
যদিও এই নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পুলিশের অন্দরেই। লালবাজারের খবর, বর্তমানে কলকাতা পুলিশের ওয়্যারলেস বিভাগে পুলিশকর্মীর সংখ্যা শ’তিনেক। সার্জেন্ট রয়েছেন প্রায় ৪০ জন। এঁদের মধ্যে অনেকেই বাড়ি থেকে মোটরবাইকে চেপে যাতায়াত করেন। তাঁদের একাংশ বলছেন, সময় মতো অফিসে পৌঁছতেই মোটরবাইক চড়েন তাঁরা। মোটরবাইক বারণ হয়ে গেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
চাকদহ থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে কলকাতায় কাজে আসছিলেন তরুণ সার্জেন্ট রাকেশ কুন্ডু। পুলিশের দাবি, কম দৃশ্যমানতার জন্য রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা মারেন তিনি।
ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ডিসি (ওয়্যারলেস) বিশ্বজিৎ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘মাথায় হেলমেট থাকা সত্ত্বেও মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ওই সার্জেন্টের মৃত্যু হয়েছে। আগামী দিনে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে যতটা সম্ভব মোটরবাইক ব্যবহার এড়াতে বলেছি। মোটরবাইক ব্যবহার করলে অবশ্য কোনও শাস্তি দেওয়া হবে না।’’
এই পরামর্শ নিয়ে ওয়্যারলেস বিভাগের এক সার্জেন্টের মন্তব্য, ‘‘আমাদের পেশায় ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছনোটা খুব জরুরি। মোটরবাইক বন্ধ হলে সমস্যায় পড়তে হবে।’’ আর এক সার্জেন্টের কথায়, ‘‘মোটরবাইক ব্যবহার না করলে আমাদের অফিস করাই কঠিন হয়ে উঠবে।’’ অন্য এক সার্জেন্টের বক্তব্য, ‘‘রাত একটা-দুটোর সময়ে অফিস থেকে ফিরব কী ভাবে? ওই সময়ে তো আর বাস-ট্রেন পাওয়া যায় না। আবার অফিসের গাড়িও পাওয়া যায় না। তাই মোটরবাইক ছাড়া গতি নেই।’’
তবে এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। পুলিশের অনেকে এ-ও বলছেন যে, এই পরামর্শ মূলত দূর থেকে আসা অফিসারদের দেওয়া হয়েছে। দিনভর খাটুনির পরে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে প়ড়েন। অবসন্ন শরীরে দীর্ঘক্ষণ ধরে মোটরবাইক চালাতে গেলে বিপদ হতে পারে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে অফিসে আসার পথেও আচমকা চোখ বুজে আসতে পারে।’’ এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘রাজপথে মোটরবাইক চালাতে গিয়ে সামান্য ভুল হলে অনেক ব়ড় খেসারত দিতে হতে পারে। তার চেয়ে সামান্য দেরি হলে ক্ষতি নেই।’’ ওয়্যারলেস বিভাগের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনার দরকার নেই। এটা আমরা বারবার বলছি।’’