এ রকমই নোটিস পড়েছে দমদম পুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
জলাতঙ্কের প্রতিষেধকেও ‘আমরা-ওরা’! এমনটাই ঘটছে দমদম পুরসভায়।
জলাতঙ্কের প্রতিষেধক পেতে লাগবে কাউন্সিলরের শংসাপত্র। দমদম পুর হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে টাঙানো এ হেন নোটিস দেখে হতবাক ওই প্রতিষেধক নিতে আসা রোগীর আত্মীয়স্বজন। তাঁরা দেখেন, কাউন্সিলরের শংসাপত্র যাঁরা আনতে পারেননি, তাঁরা চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। ওই শংসাপত্র থাকলে তবেই জুটছে প্রতিষেধক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, কাউন্সিলর যদি বাইরে থাকেন, তা হলে কী হবে? তাঁদের অভিযোগ, এতে তো ‘আমরা ওরা’ মতো একটা বিভাজন তৈরি হবে। বিরোধী দলের সমর্থক, দমদমের এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘কাউন্সিলরের কাছে যেতে হলেও তো দশ জনকে ধরতে হবে! তা হলে তো প্রতিষেধক নিতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।’’ সে ক্ষেত্রে কাউকে কুকুর, বেড়াল বা বাঁদর আঁচড়ে-কামড়ে দিলে কী হবে? প্রশ্ন তুলেছেন ওই বাসিন্দা।
কেন এই নোটিস? দমদম পুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এত দিন পুর হাসপাতালগুলিকে বিনামূল্যে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ওই প্রতিষেধক সরবরাহ করত। গত কয়েক মাস ধরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না জলাতঙ্কের প্রতিষেধক। তাই পুরসভাকেই কিনতে হচ্ছে ওই ওষুধ। সরবরাহ তাই নিয়ন্ত্রিত। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের পুরসভা এলাকার কেউ যাতে বঞ্চিত না হন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা।’’
কুকুর, বাঁদর বা বেড়াল কামড়ালে রোগীকে অ্যান্টি-রেবিস প্রতিষেধক দিতে হয়। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে পুর হাসপাতালগুলির চাহিদা অনুযায়ী সেই প্রতিষেধক সরবরাহ করতে পারছে না উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সম্প্রতি প্যাকেট-পিছু ৩০৮ টাকা দরে মোট ৫০ হাজার টাকার প্রতিষেধক কেনা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে একমাত্র দমদম পুরসভার বাসিন্দাদেরই বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাই কাউন্সিলরের শংসাপত্র দেখতে চাওয়া হচ্ছে।’’
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এক পুরকর্তার দাবি, ‘‘দমদম পুর হাসপাতালে দক্ষিণ দমদম, উত্তর দমদম-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ প্রতিষেধক নিতে আসেন। পুর তহবিলের অর্থ খরচ করে যখন প্রতিষেধক কিনছি, তখন অন্য পুরসভার বাসিন্দাদের দায়িত্ব কেন নেব?’’ দমদমের পুরপ্রধান হরীন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে এখন প্রতিষেধক পেতে অসুবিধা হচ্ছে। বাইরে থেকে প্রতিষেধক কিনে বিনামূল্যে পরিষেবা দিচ্ছি। তাই যাঁদের কাছে কাউন্সিলরের দেওয়া শংসাপত্র থাকবে, তাঁদেরই বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে পুর এলাকারই বাসিন্দা তা কাউন্সিলর শংসাপত্রে লিখে দেবেন।’’
কিন্তু সচিত্র পরিচয়পত্র দেখালেও তো কোন ওয়ার্ডের বাসিন্দা, তা জানা সম্ভব। তা হলে কাউন্সিলরের শংসাপত্র কেন? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘শংসাপত্র থাকলে ভাল। নইলে পুর এলাকার বাসিন্দা নিশ্চিত করবে, এমন যে কোনও প্রমাণপত্র স্বাগত!’’