শুভব্রত মজুমদার
বেহালায় মায়ের দেহ তিন বছর ফ্রিজারে রেখে তাঁর পেনশন তোলার অভিযোগে ধৃত শুভব্রত মজুমদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিউ আলিপুর শাখায় ছিল শুভব্রতর মা বীণা মজুমদারের পেনশন অ্যাকাউন্ট। সেখান থেকে কী ভাবে এত দিন তাঁকে বীণাদেবীর টাকা দেওয়া হল, তা নিয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরেই চলছে পুলিশি তদন্ত। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনে পুলিশ। এর পরেই নিউ আলিপুর থানায় ওই ব্যাঙ্কে লিখিত অভিযোগ জমা করা হয়। তার ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে একটি তদন্ত করে শনিবার রাতে শুভব্রতের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা রুজু করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বেহালা জেমস্ লং সরণির বাসিন্দা বীণা মজুমদারের (৮৪) মৃত্যু হয়। কিন্তু তার পরে বীণাদেবীর ছেলে শুভব্রত বড় মাপের ফ্রিজার এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র কিনে, রাসায়নিক দিয়ে মায়ের দেহ তাতে রেখে দেন। পুলিশকে জেরায় শুভব্রত জানিয়েছিলেন, মাকে বাঁচিয়ে তোলার আশায় ফ্রিজারে রেখেছিলেন তিনি। এই কাজে বিদেশের বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু মাকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টার পাশাপাশি তিনি ব্যাঙ্ক থেকে মায়ের পেনশন তুলে গিয়েছেন টানা তিন বছর। গত ৬ এপ্রিল বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই পুলিশ ৪৬ বছরের শুভব্রতকে গ্রেফতার করে। তার পরে থেকে পাভলভে চিকিৎসাধীন তিনি।
কিন্তু কী করে মৃতা মায়ের পেনশন তুলতেন তিনি, তদন্তে নেমে তা নিয়ে সমস্যায় পড়ে পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশ তিন বার ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বীণাদেবীর পেনশন সংক্রান্ত নথি চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছিল। বিশেষ করে বীণাদেবীর ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ কে জমা করতেন, কাকে ‘মা’ সাজিয়ে শুভব্রত ওই সার্টিফিকেট জমা করতেন, তা জানার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কের সার্ভিস ম্যানেজারকে বেশ কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদ করলেও পুলিশ এখনও জানতে পারেনি কাকে নিয়ে গিয়ে শুভব্রত ওই সার্টিফিকেট জমা করেছিলেন। সেই সব সার্টিফিকেটের সই-সহ বাকি কাগজপত্র এ বার খুঁটিয়ে দেখতে চলেছেন তদন্তকারীরা। এমনকী, গত তিন বছরে শুভব্রত কী করে টাকা তুলতেন এবং ব্যাঙ্কে কত বার এসেছিলেন, ব্যাঙ্কের সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে তার কিনারা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। ব্যাঙ্কের নথি নিয়ে শুভব্রতকেও আবার জেরা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে তদন্তকারীদের অনুমান, লাইফ সার্টিফিকেট অন্য কাউকে মা সাজিয়ে জমা করলেও শুভব্রত এটিএমের মাধ্যমে টাকা তুলতেন। তা যদি না হয়, তা হলে ব্যাঙ্কের গাফিলতি রয়েছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। ফলে ব্যাঙ্ক শুভব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও ব্যাঙ্কের কর্মীদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।