কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
শহরের রাস্তায় গড়ে ওঠা গণ শৌচাগার পরিষ্কার রাখতে সেগুলির পাশে এটিএম ও রেস্তরাঁ তৈরি করতে চায় কলকাতা পুরসভা। পুরকর্তাদের ধারণা, শৌচাগারের পাশে রেস্তরাঁ এবং এটিএম গড়ে তুললে সেখানে মানুষের আনাগোনা বাড়বে। তাতে জায়গাটাও নিয়মিত ভাবে পরিষ্কার করা হবে। তবে এই সমাধানসূত্র মেনে বাস্তবে এমনটা আদৌ ঘটবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সন্দিহান শহরবাসী।
এ শহরে পুরসভার অধীনে থাকা শৌচাগারগুলির পরিচ্ছন্নতার অভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরক্ত পুর প্রশাসন। সম্প্রতি পুর কমিশনারকে তা জানিয়েও দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কেন শৌচাগারগুলি নিয়মিত ভাবে পরিষ্কার করা হয় না, জানতে চেয়েছেন মেয়র। পুরসভার টাকায় গড়ে ওঠা শৌচাগারের সংখ্যাই কলকাতায় বেশি। সাধারণ মানুষের জন্য গড়ে তোলা হলেও অধিকাংশ শৌচাগারই এত নোংরা যে, কেউ সেখানে যেতে চান না। বিশেষত, মহিলারা প্রায়ই এই ধরনের শৌচাগার থেকে মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হন।
পুরকর্তাদের বক্তব্য, পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার যখন শৌচাগার ব্যবহার করতে দিয়ে মানুষের থেকে টাকা নিচ্ছেন, তখন শৌচাগার পরিচ্ছন্ন রাখাটাও তো তাঁর দায়িত্ব? সেই কাজটুকু তিনি করবেন না কেন? মেয়রের কাছে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, টাকা নিলেও শৌচাগার পরিষ্কার রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না ঠিকাদার সংস্থা।
আরও পড়ুন: স্কুলের পথে ছাত্রীর উপরে হামলা
এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘‘ওই সমস্ত অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তা যাচাই করে দেখেছি। তাই শৌচাগার পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে পুর কমিশনারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ মেয়রের নির্দেশ পেয়েই পুর কমিশনার বিভাগীয় অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেও বলা হয়, শহরের শৌচাগারগুলির অধিকাংশই অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। জরুরি পদক্ষেপ না করলে তা থেকে শুধু রোগই ছড়াবে না, পরিবেশও দূষিত হয়ে উঠবে। তখনই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ঠিক করা হয়, শৌচাগারের সঙ্গে এটিএম এবং খাবারের স্টল বা রেস্তরাঁ গড়ে তোলা হবে। তাতে জায়গাটা পরিষ্কার থাকবে। শৌচাগারও পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে। এর পরেই পুর কমিশনার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেন, শহরের সমস্ত শৌচাগার ঘুরে দেখবে পুরসভার বস্তি দফতর। ওই দফতরের হাতেই শৌচাগারের দায়িত্ব রয়েছে। শৌচাগার নিয়ে সমীক্ষা করার পরে সেই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে পুর কমিশনারের কাছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিনশো শৌচাগার রয়েছে পুরসভার। এক-একটি শৌচাগার গড়তে পাঁচ থেকে পনেরো লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। পরে দরপত্র ডেকে সেগুলির দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঠিকাদার সংস্থাকে। তাতে শৌচাগার পরিচ্ছন্ন রাখার শর্তও রয়েছে।
কিন্তু সেই কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে।
পুরসভার বস্তি দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘বর্তমানে ৩৫০টির মতো শৌচাগার রয়েছে। এর মধ্যে চারটি শৌচাগারের সঙ্গে রেস্তরাঁ বা এটিএম তৈরি করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, শৌচাগারগুলি আগের তুলনায় বেশি পরিষ্কার থাকছে।’’ মেয়রকে তা জানানোয় তিনি এ বার শহরের অন্যান্য শৌচাগারের পাশেও রেস্তরাঁ এবং এটিএম তৈরির বিষয়ে জোর দিয়েছেন। খুব দ্রুত এ ব্যাপারে সমীক্ষা শুরু হবে।