—প্রতীকী চিত্র।
ডেঙ্গি মোকাবিলায় আগামী তিন মাস গুরুত্বপূর্ণ কলকাতা পুরসভার কাছে। শহরের বিভিন্ন সরকারি আবাসনগুলি পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ইতিমধ্যেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত শুধুমাত্র উত্তর কলকাতার ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই ৩৩ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ওই ওয়ার্ডের সরকারি আবাসন গুলিতে মে ও জুন মাসে মোট ছ’জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি আবাসনে মশাবাহিত রোগ বাড়ার পিছনে সেখানকার পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা উঠে এসেছে। আবর্জনা সাফাই থেকে শুরু করে নিকাশি সমস্যার সমাধান আবাসনের কর্মীরাই করে থাকেন। কিন্তু অভিযোগ, সেই কাজ ঠিক মতো না হওয়ায় মশার প্রজননস্থল হয়ে উঠেছে আবাসনগুলি। এই প্রসঙ্গে কলকাতার ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘জল জমে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে, সেই প্রমাণ পেলে আমরা এ বার কোনও সরকারি সংস্থাকে রেয়াত করব না। প্রথমে নোটিস দেওয়া হবে। তার পরেও কাজ না হলে পুরসভা আদালতে যাবে।’’
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, জল জমে মশার লার্ভা জন্মানোয় শুধু ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই গত কয়েক মাসে ১৮৭টি নোটিস দেওয়া হয়েছে। তা না মানায় ১৫টি ক্ষেত্রে পুর আদালতে মামলা করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের করিম বক্স রো ঠিকানায় ছ’টি সরকারি আবাসনের ১৪টি ওভারহেড ট্যাঙ্কের ঢাকনা খোলা ছিল। ঢাকনাহীন সেই সব ট্যাঙ্কে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছিল। গত ২৯ মে এবং ৬ জুন পুরসভার তরফে ঢাকনালাগানোর নোটিস দেওয়া হলেও মাত্র ন’টি ট্যাঙ্কে ওই কাজ হয়েছে। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘উত্তর কলকাতার আবাসনের এগজ়িকিউটিভ (ডিভিশন-২)-কে নোটিস দেওয়ার পরেও কাজ না হওয়ায় পুরসভা শীঘ্রই পুর আদালতে মামলা করবে।’’
আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ওই আবাসন একটি উদাহরণ মাত্র। শহরের বেশির ভাগ আবাসনেই এই ছবি দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে উত্তর কলকাতার ৩৫, কাশীপুর রোডের একটি সরকারি আবাসনে গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকেরা প্লাস্টিকের মধ্যে মশার লার্ভা দেখতে পান। এমনকি, ওই আবাসনের নীচের তলায় একটি ট্যাঙ্কের ঢাকনা খোলা থাকায় সেখানেও মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই আবাসনেও শীঘ্রই নোটিস দেওয়া হবে বলে পুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর। অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারি আবাসনের মধ্যে নানা পরিষেবা দেয় রাজ্যের আবাসন দফতর। আবাসনগুলির বেশির ভাগ ৫০ বছরের বেশি পুরনো। অভিযোগ, সেখানে সাফাইয়ের কাজ যথাযথ ভাবে হয় না। ময়লায় জল জমে অনেক ক্ষেত্রে মশার লার্ভা জন্মায়। আবার, আবাসনের চৌবাচ্চা ঢাকনাহীন থাকায় মশা সেখানেও বংশবিস্তার করে। এক পুর আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘মশার লার্ভা চিহ্নিত হওয়ার পরে নোটিস পাঠালেও আবাসন বিভাগ গুরুত্ব দেয় না। ফলে আবাসিক তথা আশপাশের বাসিন্দাদের ভুগতে হয়।’’
পুরসভার এই অভিযোগ পুরোপুরি নস্যাৎ করে আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের প্রশ্ন, ‘‘দেখতে হবে, মশা দূরীকরণে পুরসভা আবাসন দফতরের কাকে নোটিস দিচ্ছে? আবাসন দফতরও চায়, শহর থেকে মশা দূর হোক। কিন্তু নোটিস দফতরের একেবারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।’’মন্ত্রীর কথায়, ‘‘ঠিক জায়গায় অভিযোগ জানালে আবাসন দফতর যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আবাসন নিয়ে অভিযোগ থাকলে পুরসভার তরফে আমাকে জানানো হোক। আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’