আরও এক পুর নির্বাচনের প্রতীক্ষায় কলকাতা। এ শহর নিয়ে কী ভাবছেন ওঁরা?
Spitting

Kolkata Municipal Election 2021: ফুটপাতে পা পড়ুক, থুতু ফেললে হোক জরিমানা

তবে ভালবাসি জেলা শহরকেও। শৈশবের কিছুটা সময় বিভিন্ন জেলা ও মফস্সল শহরে কাটিয়েছি।

Advertisement

জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় (আইনজীবী)

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ শহরে নয়, বাঁকুড়ার সোনামুখীতে আমার জন্ম। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছি। একটু বড় হতেই এসে থাকতে শুরু করি কলকাতার সমাজগড়ে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের নিয়ে তৈরি ওই এলাকার পৈতৃক বাড়িতে। সেখানেই বাল্যকাল থেকে কৈশোর কাটিয়ে প্রৌঢ়ত্বের দিকে। এ শহরেই রয়েছে আমার প্রাণভোমরা।

Advertisement

তবে ভালবাসি জেলা শহরকেও। শৈশবের কিছুটা সময় বিভিন্ন জেলা ও মফস্সল শহরে কাটিয়েছি। তাই সেখানকার আদালতে মামলা করার সুযোগ পেলে আজও ছাড়ি না। সে বারাসত, বনগাঁ, বসিরহাট, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, বহরমপুর, বর্ধমান, মেদিনীপুর— যেখানেই হোক না কেন। চল্লিশ বছর পরে বহরমপুর শহরে মামলা লড়তে গিয়ে এক সন্ধ্যায় খুঁজে পেয়েছিলাম আমাদের সেই ভাড়া বসতবাড়ি। তমলুকের সেই দোকানও খুঁজে বার করেছিলাম, যেখান থেকে বাবা ছোটবেলায় বই কিনে দিতেন।

আর কলকাতা! পূর্ববঙ্গ থেকে ছিন্নমূল হয়ে পূর্বপুরুষেরা বিজয়গড়, সমাজগড়, অরবিন্দনগর, আজাদগড়ে এসে উঠেছিলেন। তার পর থেকে এ শহরই আমাদের অন্নদাতা। ঠাকুরদা ছিলেন উত্তর কলকাতার টাউন স্কুলের শিক্ষক। বাবাও কিছু দিন বিজয়গড়ের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। পরে রাজ্য পুলিশে
যোগ দেন। বিজয়গড়ের ব্যায়ামাগারে বাবা ব্যায়াম করতেন। আমিও করেছি। আমার ছেলেও করবে। স্থানীয় গাঁধী কলোনি স্কুলের ছাত্র আমি।

Advertisement

ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লন্ডন, সুইৎজ়ারল্যান্ড, ইটালি, ফ্রান্স-সহ পৃথিবীর যেখানেই গিয়েছি, ঘরের টান হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সারা দিন কোর্টের
ধকলের পরে সমাজগড়ের পাড়ার গলিতে ঢুকে যখন শুনি সন্ধ্যার শাঁখের আওয়াজ বা হারমোনিয়ামে কচি কণ্ঠের রেওয়াজ, নিমেষে সব ক্লান্তি উবে যায়। এ অঞ্চলে প্রোমোটার থাবা বসালেও এখনও প্রচুর সবুজ আছে। পার্ক আছে। সেখানে ছোটরা খেলে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে নিজের কথা শোনাও দায় হয়ে
যায়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, এই ছোট্ট পাড়ার পৈতৃক বাড়িতেই যেন আমার শেষ শ্বাস পড়ে।

দক্ষিণ কলকাতা বেশি সাজানো উত্তরের তুলনায়। গল্ফ গ্রিনের দু’ধারে সবুজের সমারোহ মোহিত করে দেয়। তবে একটু বৃষ্টি হলেই জল জমা, খোলা ম্যানহোলে মানুষের পড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু বড্ড কষ্ট দেয়।

কলকাতার আরও একটা জায়গা আমায় টানে। উত্তরের বনেদি বাড়ি, সাবেক পাড়া। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে বৌ-ছেলেকে নিয়ে কুমোরটুলি যাই ঠাকুর বানানো দেখতে। শ্যামবাজার, বাগবাজার, শোভাবাজারের অলিগলিতে, গঙ্গার ঘাটে তিন জনে ঘুরে বেড়াই। টাউন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলেকে বলি, এই সেই স্কুল, যেখানে তোর ঠাকুরদার বাবা পড়াতেন। তাঁর পায়ের ধুলো আজও কোথাও মিশে রয়েছে।

সেই স্মৃতিপথের মাঝে পড়ে কিছু ভাল না লাগা জিনিস। যেমন, রাস্তার কল থেকে অবিশ্রান্ত ধারায় বেরিয়ে যাচ্ছে জল। বহু জায়গায় ফুটপাত বেশ উঁচু। বয়স্ক, বাচ্চা, অসুস্থদের পক্ষে সেই ফুটপাতে ওঠা কষ্টসাধ্য। রয়েছে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ার সমস্যা। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন প্রান্তে এই দখলদারি রয়েছে। এগুলোর সমাধান নিয়ে সরকারের মনোনিবেশ করা উচিত। গড়িয়া অঞ্চলের কামালগাজির দিকে দ্রুত উড়ালপুলের প্রয়োজন আছে। সেটাও ভাবুক সরকার।

খুব খারাপ লাগে যখন মানুষকে যত্রতত্র থুতু ফেলতে দেখি। থুতু ফেললেই জরিমানা করতে কলকাতা পুলিশের দ্রুত অভিযান শুরু করা উচিত। তা হলে সরকারের ঘরেও টাকা আসবে। মানুষের এই প্রবণতা কমলে শহর পরিচ্ছন্ন ও রোগমুক্তও হতে পারে। বর্ষায় ম্যানহোলের মুখ বন্ধ হওয়া বা নর্দমা রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার মূল কারণ কিন্তু চিপস, পানমশলার প্যাকেট। এই প্রবণতা বন্ধ করতে স্পট ফাইন নেওয়ার অধিকার দিতে হবে কলকাতা পুলিশকে।

আজকাল রাত বাড়লেই শুরু হয় আর এক উপদ্রব। একটা মোটরবাইক। হেলমেটহীন দুই থেকে তিন জন তাতে চড়ে তীব্র বেগে ছুটছেন। নিজেরাও দুর্ঘটনায় পড়েন। অন্যের জীবনের ঝুঁকিও বাড়ান এঁরা। ওঁদের আটকানো যায় না?

আরও একটা বিষয়, এ শহরের জনসংখ্যা অনেক। দূর থেকে কাজের সন্ধানে জনস্রোতও আসে। তুলনায় গণ শৌচালয় বা রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলার সুষ্ঠু ব্যবস্থা কম। সেটাও জরুরি। সরকারকে এই বিষয়টা নিয়েও ভাবতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement