দরজা আটকে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করলে এ বার যাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ফাইল চিত্র
অবশেষে নড়ে বসল মেট্রো। দরজায় হাত আটকে সজলকুমার কাঞ্জিলালের মৃত্যুর পরে এ বার সিদ্ধান্ত হয়েছে, মেট্রোয় হুড়োহুড়ি করে উঠতে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে কেউ দরজা আটকানোর চেষ্টা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন কর্তৃপক্ষ। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা ছ’মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। অপরাধের মাত্রা বেশি হলে জেল ও জরিমানা, দুটোই একসঙ্গে হবে।
বুধবার কলকাতা মেট্রোর তরফে সব ক’টি স্টেশনে এই মর্মে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। যাত্রীদের সচেতন করতে প্রতিটি স্টেশনে ঘোষণাও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া, মেট্রোর প্ল্যাটফর্মে বসানো টেলিভিশনেও বিশেষ ভিডিয়ো মারফত যাত্রীদের ওই বার্তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেট্রোকর্তারা।
মেট্রো সূত্রের খবর, ১৯৮৯ সালের ভারতীয় রেল আইনের ১৪৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি কোনও রেল কর্মচারীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর সরকারি কাজে বাধা দেন তবে সর্বোচ্চ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা ছ’মাসের কারাদণ্ড অথবা দুটোই হতে পারে। ওই আইনকে কাজে লাগিয়েই ‘বিশৃঙ্খল’ যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
উদ্যোগ: যাত্রীদের সতর্ক করতে সব মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দেখানো হচ্ছে এই বার্তা। নিজস্ব চিত্র
গত শনিবার শেষ মুহূর্তে ট্রেনে উঠতে গিয়েই পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন কসবার বাসিন্দা সজলবাবু। মেট্রোর দরজায় তাঁর হাত আটকে যায় বলে অভিযোগ। কী ভাবে, কোন পরিস্থিতিতে সজলবাবু ওই দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন, তা জানতে মেট্রো রেলের সেফটি কমিশনার জনককুমার গর্গ তদন্ত করছেন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই তদন্ত শুরু হওয়ার কথা। তদন্তের প্রয়োজনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত রেক থেকে ঘটনার দিনের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছেন সেফটি কমিশনার। এ জন্য রেক নির্মাণ সংস্থা, চেন্নাইয়ের ‘ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি’র প্রতিনিধিরা ছাড়াও মেট্রোর দরজা এবং ব্রেক নির্মাণ সংস্থার প্রতিনিধিদেরও ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
তবে ওই তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই মেট্রোয় নতুন করে বিভ্রাটের পরিস্থিতি এড়াতে এবং ‘বিশৃঙ্খল’ যাত্রীদের পথে আনতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ জারি হল।
এত দিন মেট্রো স্টেশনে থুতু ফেলা, স্টেশন নোংরা করা এবং কম ভাড়ার টোকেন কাটার জন্য জরিমানা চালু ছিল। এ বার তার সঙ্গে জুড়ল মেট্রোর দরজা আটকে রাখার বিষয়টিও। নির্দিষ্ট মূল্যের টোকেন না কাটার ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা পর্যন্ত এবং প্ল্যাটফর্মে থুতু ফেলার ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হত।
মেট্রোকর্তাদের অভিযোগ, যাত্রীদের অনেকেই দেরি করে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে শেষ মুহূর্তে হাত, পা বা ছাতার হাতল দিয়ে দরজা আটকে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন। এতে দরজা খোলা ও বন্ধের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অযথা বেশি সময় থামতে হয় একটি ট্রেনকে। এর ফলে মেট্রোর সময়ানুবর্তিতা যেমন ধাক্কা খায়, তেমনই শেষ মুহূর্তে ট্রেনে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। এই প্রবণতা রুখতেই রেলের আইনকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক মেট্রোকর্তা। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত রেলরক্ষী বাহিনীর কর্মী এবং মেট্রোকর্মীদের তত্ত্বাবধানে এই নজরদারি চলবে।