মেট্রো কর্তৃপক্ষের অভিযোগ নিয়ে জবাব কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের। — ফাইল চিত্র।
মেট্রোর সাবওয়ে ও লাইনে জল ঢুকে পড়ার জন্য কলকাতা পুরসভার দিকেই আঙুল তুললেন কর্তৃপক্ষ। সোমবার পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেড স্টেশনের মাঝে মেট্রোর লাইনে জল জমার কারণে চার ঘণ্টারও বেশি স্বাভাবিক মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হয়। পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের সাবওয়েতেও জমে ছিল জল। সোমবার সন্ধ্যায় মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পার্ক স্ট্রিটে সাবওয়ের মাথায় পুরসভার যে নিকাশি নালা ছিল, তাতে ফাটল ধরেছে। সেই কারণে বিপত্তি। কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম যদিও ভারী বৃষ্টিকে দায়ী করে জানিয়েছেন, সকলে ‘অপদার্থ’ হয়ে বসে রয়েছেন, এমন নয়।
কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, সোমবার পার্ক স্ট্রিট স্টেশন জলমগ্ন হওয়ার পর মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ার এবং আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁরা দেখেন, পার্ক স্ট্রিটে সাবওয়ের উপর পুরসভার যে নিকাশি নালা রয়েছে, তাতে ‘লিকেজ’ হয়েছে। সে কারণে স্টেশনের ‘ডি-ওয়াল’-এর সন্ধিস্থল দিয়ে ভিতরে ঢুকে আসছিল জল। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না হয়, তা নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ করা হয়েছে।
মেয়র ফিরহাদ এই অভিযোগ পুরোপুরি মানতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন, পুরসভার নিকাশি নালা ‘লিক’ করে মেট্রো স্টেশনে জল ঢোকার সুযোগ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘সে রকম সুযোগ নেই। মেট্রোর গার্ড ওয়াল পোক্ত। ওদের কোনও একটা জায়গায় ‘লিকেজ’ হয়েছে, তাই জল ঢুকেছে।’’ এর পর তিনি বলেন, ‘‘ভগবান কোথায় কত মেঘ দেবে (তা নির্ধারণ করা যায় না)! কলকাতায় এক দিনে ২৬৪ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। তাতে আমাদের কর্মীরা দারুণ কাজ করেছেন। এ ধরনের ছোটখাটো ঘটনা থাকবেই। তার মানে এই নয় সকলে অপদার্থ হয়ে বসে রয়েছি।’’
পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহও প্রাকৃতিক বিপর্যকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পুরসভা এবং কর্মীদের যা ক্ষমতা, তার বাইরে বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার মেট্রো তো আমাদেরও। আমরা কি চাইব কলকাতা মেট্রোয় জল ঢুকে যাত্রী পরিষেবা ব্যাহত হোক? আমরা দিনরাত জল নামানোর চেষ্টা করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই হয়েছে এ সব।’’
সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হয়। পার্ক স্ট্রিট-এসপ্ল্যানেডে জল জমার কারণে গিরিশ পার্ক থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, যাত্রী সুরক্ষার কথা ভেবে প্রথমে কবি সুভাষ থেকে টালিগঞ্জ এবং গিরিশ পার্ক থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত ভেঙে মেট্রো চালু করা হয়। কর্মীরা পাম্পের সাহায্যে লাইন থেকে জল নিষ্কাশন করেন। কিন্তু বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টির কারণে পার্ক স্ট্রিট, এসপ্ল্যানেড, ময়দান এলাকায় জল জমে। লাইন থেকে জল নিষ্কাশন করতে বেগ পেতে হয় মেট্রোর কর্মীদের। ১০টা ২১ মিনিটে ময়দান থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত মেট্রো চলাচল শুরু হয়। দুপুর ১২টা ০৫ মিনিটে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয় মেট্রো পরিষেবা। সপ্তাহের প্রথম দিনে মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। এর পরেই আধিকারিকেরা পর্যবেক্ষণ করে পুরসভার নিকাশি নালায় ওই লিকেজের বিষয়টি দেখতে পান বলে জানিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।