ডেঙ্গি সচেতনতা বৃদ্ধিতে পুরসভার মিছিল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
পুরসভার পদযাত্রা, কিন্তু মেয়র কোথায়!
ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কলকাতা পুরসভা ‘সজাগ থাকুন বছরভর, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর’— স্লোগান নিয়ে শনিবার রাস্তায় নামলেও, যে ভাবে নামমাত্র পদযাত্রা শুরু করিয়ে দিয়ে মেয়র রাজনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে চলে গেলেন, তাতে পুর-কর্তৃপক্ষ নিজেরা কতটা সচেতন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
একেই কাউন্সিলর-পুরকর্মীরা মেলা, উৎসব নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সচেতনতা মিছিল শুরু করতে জানুয়ারির প্রথম ১৯ দিন বেরিয়ে গেল। সামনে সরস্বতী পুজো, নেতাজি জয়ন্তী, প্রজাতন্ত্র দিবস। ফের উৎসব, ফের মেলা। অর্থাৎ এ মাসে শুধু এই শোভাযাত্রাই সার। আর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এ দিনের পদযাত্রাকে মেয়র-সহ শহরের বিধায়ক, সাংসদ এবং মন্ত্রীরা তেমন আমল না দেওয়ায় মানুষকে কতটা সচেতন করা যাবে তা নিয়ে পুর-আধিকারিকেরা সন্দিহান। এক পুর আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘যে রোগটির উপস্থিতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই মানতে চাননি, তাতে মেয়র, মন্ত্রীরা যে সামিল হবেন না সেটাই তো স্বাভাবিক।’’
কলকাতা পুরসভার কেন্দ্রীয় ভবন থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। তা পরিক্রমা করে ধর্মতলা চত্বর। সঙ্গে পোস্টার, ‘মশা মারুন, মানুষ বাঁচান।’ পাশাপাশি শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বের হয় সচেতনতা মিছিল। উল্টোডাঙায় তিন নম্বর বরো এলাকায় সেই মিছিলে ছিলেন ক্রিকেটার স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও। গত বছর তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেঙ্গিতে।
এ দিন পুরসভার কেন্দ্রীয় ভবন থেকে বেরোনো মূল পদযাত্রা জুড়ে ছিল রংবেরঙের পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার ও পোস্টার। ছিল ঢাক ও রণ-পা। স্কুলের ছেলেমেয়েরাও সামিল হয়েছিল ওই মিছিলে। কিন্তু মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তেমন সাড়া না পাওয়ায় পদযাত্রার উদ্যোক্তারা হতাশ। পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, পদযাত্রায় সামিল হওয়ার জন্য শহরের মন্ত্রী, সাংসদদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা ছাড়া কারও কাছ থেকে সাড়া মেলেনি। অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে কিছু সময়ের জন্য হাজির থেকে বেরিয়ে যান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা শহরকে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া মুক্ত করার থেকে আর কী জরুরি কাজ থাকতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেও ছাড়েননি পুর-আধিকারিকদের কেউ কেউ।
এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘মশাবাহিত রোগ নিবারণের কাজে এ বারও সকলকে সামিল করা গেল না। ওই আধিকারিকের হুঁশিয়ারি, মশার চরিত্র যে ভাবে দ্রুত বদলাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে সংক্রমণ আরও ভয়ঙ্কর আকার নেবে। প্রথমেই তাই মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা প্রয়োজন।
মন্ত্রী শশী পাঁজা নাগরিকদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সব কাজ পুরসভার হাতে ছেড়ে দেব কেন? নিজেদের বাড়ি নিজেদেরই সাফ করতে হবে। বাড়িতে জল জমতে দেব না। এ সব তো আমরাই দেখতে পারি।’’ মঞ্চ থেকে পদযাত্রা শুরু করিয়ে মেয়র বলেন, ‘‘আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। এটা ধারাবাহিক কাজ। তাই শহর থেকে ডেঙ্গির আতঙ্ক হটানোই পুরসভার প্রধান কাজ।’’
স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ ঘোষণা করেন, কয়েক দিনের মধ্যে ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার টিম বার হবে প্রতিটি এলাকার বাড়ি বাড়ি। দু’দিন স্থানীয় কাউন্সিলরেরা ঘুরবেন তাঁদের সঙ্গে।
কিন্তু মেয়র পারিষদের এই আহ্বান অন্য কাউন্সিলরদের কানে ঢুকবে কি না, তা নিয়ে পুর আধিকারিকদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহেও অধিকাংশ কাউন্সিলরকে রাস্তায় নামানো যায়নি। বছরভর তাঁরা কী করেন সেটাই এখন দেখার!