Kolkata Karcha

পুণ্যাহ রূপ নিল বৈশাখী উৎসবে

মুর্শিদকুলি খানের সময়ে আমন ধান রোপণের মরসুমের শুরুতেই খাজনা আদায়ের আয়োজন হত, তার নাম ছিল ‘পুণ্যাহ’। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১০:০৭
Share:

হুতোমের আমলে বাংলা নববর্ষের মান রাখতেন কলসি ‘উচ্ছুগ্গুকর্তা’ (উৎসর্গকর্তা) আর নতুন খাতাওয়ালারা। কলসি উৎসর্গ লোপ পেয়েছে বহু দিন। টিমটিম করে জ্বলছে হালখাতার প্রথা। এখনও অনেকের কাছে নববর্ষে উৎসবের আসল মজা হালখাতা, শোলার কদমফুল আর আম্রপল্লবে সেজে ওঠে দোকান (ছবি)। মাইকে, বক্সে গান বাজে। পুরনো ধার-বাকি মিটিয়ে নতুন খাতা খুলতে আসেন ক্রেতারা, তাঁদের আপ্যায়নে আজকাল থাকে মিষ্টির প্যাকেট। আগে অনেক আড়তদার বাড়িতেই বসাতেন দরবেশ, পান্তুয়া আদি হরেক মিষ্টি তৈরির ভিয়েন।

Advertisement

বেচাকেনা আর ধার শোধের কেজো অনুষ্ঠানে খাওয়াদাওয়া-গানবাজনার এই উৎসব বাংলার নবাবি আমলের ঐতিহ্য। মুর্শিদকুলি খানের সময়ে আমন ধান রোপণের মরসুমের শুরুতেই খাজনা আদায়ের আয়োজন হত, তার নাম ছিল ‘পুণ্যাহ’। সম্ভবত জগৎ শেঠদের সাহায্যে তিনি এই ব্যবস্থার প্রচলন করেন বলে মত অনেকের। চৈত্র-শেষে ও বৈশাখের শুরুর দিকে মুর্শিদাবাদ দরবারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন নবাব। বৈশাখে বাংলার নবাবের আমন্ত্রণে জমিদাররা স্বয়ং বা তাঁদের প্রতিনিধিরা মুর্শিদাবাদে যেতেন খাজনার শেষ কিস্তি জমা দিতে। খাজনা দেওয়ার পর সোনার মোহর নজরানা দিলে, নবাব তাঁদের পদমর্যাদা অনুসারে খেলাৎ বা শিরোপা অর্থাৎ পাগড়ি, পোশাক ও কোমরবন্ধ দিতেন, কখনও হাতি-ঘোড়া দিয়েও সম্মান জানাতেন। আলিবর্দি খানের সময় একটি পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে বাংলার নানা অঞ্চল থেকে কয়েকশো জমিদার ও রাজকর্মচারী মুর্শিদাবাদে এসেছিলেন। নবাবের বাড়িতে দেদার উৎসব, খাবারের আয়োজন থাকত। এই উৎসবের অংশ হতে পারলে সাধারণের মনে শাসকের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ত, সুগম হত নিচুতলা থেকে খাজনা আদায় করাও। নবাবের অনুসরণে ছোট-বড় জমিদাররা নিজ কাছারিতে পুণ্যাহ আয়োজন করে প্রজাদের থেকে খাজনা তুলতেন।

জমিদারি প্রথা রদ হওয়া পর্যন্ত জমিদাররা এই নবাবি রীতি বজায় রেখেছিলেন। তবে উনিশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধে পুণ্যাহের আয়োজন সরে এসেছিল আষাঢ় বা শ্রাবণে। ভাল দিন দেখে পুণ্যাহ আয়োজিত হত। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন জমিদারি পরিচালনায় তাঁর ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি। সত্যজিৎ রায় জলসাঘর ছবিতে এনেছেন পয়লা বৈশাখের পুণ্যাহের গানবাজনা-খাওয়াদাওয়ার প্রসঙ্গ, তারাশঙ্কর যদিও ‘রায়বাড়ি’ গল্পে রথের দিন, আষাঢ় মাসে পুণ্যাহ আয়োজনের কথা লিখেছিলেন। নবাবি শাসনব্যবস্থার অংশ হিসেবে শুরু হলেও, পুণ্যাহের খাওয়াদাওয়া গানবাজনার অনুষঙ্গে রীতিমতো উৎসবে পরিণত হল পয়লা বৈশাখ। নবাবি ট্র্যাডিশন ক্রমে প্রথায় পরিণত হয়ে রূপ পেল আজকের হালখাতায়। পয়লা বৈশাখে হালখাতা সেরে মিষ্টির বাক্স আর বাংলা ক্যালেন্ডার হাতে ঘরমুখো ক্রেতা কি জানেন, কোন প্রথার উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁরা?

Advertisement

বিপ্লবী স্মরণে

বিপ্লবীদের ত্যাগের ফল আমাদের স্বাধীনতা, ক’জনকেই বা আমরা মনে রেখেছি! তথাকথিত অখ্যাত এই মানুষদের সন্ধান ও আলোকপাতই ব্রত কলকাতার ‘উল্লাসকর দত্ত অ্যাকাডেমি’র। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শুভ্রকান্তি গুপ্ত একদা খবর পেয়েছিলেন বাংলাদেশে কালীকচ্ছ গ্রামে উল্লাসকর দত্তদের বাড়ি ভেঙে বহুতল, বাজার তৈরি হবে। শুরু হয় লড়াই, বাড়ি বাঁচিয়ে তাকে ‘হেরিটেজ’ সম্পত্তিতে ফিরিয়ে দেওয়ার; এখন সে বাড়ি সরকার দেখে। প্রতি বছর ১৬ এপ্রিল উল্লাসকর দত্তের (ছবি) জন্মদিনে তাঁকে ও অন্য বিপ্লবীদেরও স্মরণ করে থাকে এই অ্যাকাডেমি। এর আগে আগরতলায় কয়েক বার হয়েছে এমন অনুষ্ঠান, এই প্রথম কলকাতায়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রথীন্দ্র মঞ্চে আগামী কাল বিকাল ৫টায় সভা, থাকবেন পূরবী রায় অমিয়কুমার সামন্ত সুবীর ভৌমিক স্নেহাশিস শূর সোমশঙ্কর রায় অরুণকুমার দে প্রমুখ, অশোককুমার মুখোপাধ্যায় ভূষিত হবেন ‘উল্লাসকর পুরস্কার’-এ।

স্মৃতি বক্তৃতা

অর্থনীতির শিক্ষক, শিক্ষা প্রশাসক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ অম্লান দত্ত তাঁর সময়ে স্রোতের বিপরীতে হাঁটা এক জন মানুষ। তাঁর প্রবন্ধের সঙ্কলনগুলি— গণযুগ ও গণতন্ত্র, প্রগতির পথ, পল্লী ও নগর, দ্বন্দ্ব ও উত্তরণ, ব্যক্তি যুক্তি সমাজ— তাঁর যুক্তিবাদী মন ও মুক্তচিন্তার স্বাক্ষর বহন করছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তনীরা তাঁর স্মরণে প্রতি বছর একটি বক্তৃতার আয়োজন করেন। এ বার সপ্তম বছরের ‘অধ্যাপক অম্লান দত্ত স্মৃতি বক্তৃতা’ দেবেন ওই বিভাগেরই প্রাক্তনী, সাংবাদিক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, বলবেন ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা অতি বিষম বস্তু’ নিয়ে। এ দিনের সভামুখ্য শুভেন্দু দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠান আগামী ২২ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টায়, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের চার তলায় তুরীয়ানন্দ সভাগৃহে।

পাঠ-সন্ধ্যা

বের্টোল্ট ব্রেশট, হের্টা ম্যুলার, এরিখ ফ্রীড, হান্স মাগনুস এনৎসেনবের্গার। প্রথম নামটি বাঙালির বহুলপরিচিত, অন্যগুলি তত নয়— অথচ ওঁদের কলমের জোরও জার্মানির সীমানা পেরিয়ে অধিকার করেছে বিশ্বমন ও মননকে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ জার্মান লেখকদের নির্বাচিত সাহিত্যকৃতি তুলে ধরতে চাইছে কলকাতার গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট/ ম্যাক্সমুলার ভবন— মূল জার্মান ভাষা ও তার সঙ্গে ইংরেজি বা বাংলা অনুবাদে পাঠ ও পরে আলোচনার মধ্য দিয়ে। ‘লেজ়েলুস্ট’ শিরোনামে প্রতি মাসের এই ‘রিডিং সেশন’গুলির প্রথমটি শুরু হচ্ছে আগামী ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, সাহিত্যে নোবেলজয়ী জার্মান লেখক হের্টা ম্যুলার-এর ছোটগল্প ও কবিতা পড়বেন ইনস্টিটিউট-এর ডিরেক্টর আস্ট্রিড ভেগে এবং জার্মান ভাষা-শিক্ষক ও অনুবাদক সুব্রত সাহা।

ওদের জন্য

অতিমারির দু’বছর বাদ দিলে চৌরঙ্গি রোডের নেহরু চিলড্রেন’স মিউজ়িয়ম প্রতি বছরই আয়োজন করে আসছে শিশু-কিশোরদের জন্য নানা কর্মশালা। এখানে যোগদানকারীরা কিছু প্রযুক্তিগত ও ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন বা কোনও ধারণা শিখে পরবর্তী কালে বাস্তবায়িত করতে পারে। এ বার তাদের ২৫তম গ্রীষ্মকালীন কর্মশালা শুরু হচ্ছে ২২ এপ্রিল। ২২ ও ২৩ এপ্রিল এই দু’দিন ‘জীবনগানে’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীত কর্মশালা পরিচালনা করবেন সঙ্গীতশিল্পী শ্রাবণী সেন। আগামী ৩০ এপ্রিল হবে ‘অভিনেতার প্রস্তুতি’ শীর্ষক নাটকের কর্মশালাও, অভিনেতা বাদশা মৈত্রের পরিচালনায়। তেরো-ঊর্ধ্ব বয়সিদের জন্য কর্মশালা অবারিতদ্বার।

সুমিকালি

কুনোইয়োশি মুরাতা জাপানের শিল্পী, সাভিনা তারসিতানো ইটালির। দুই মহাদেশের, দুই সমাজ-সংস্কৃতিতে দু’জনের বেড়ে ওঠা, কিন্তু শিল্পের ভাষা তো সার্বজনিক— দুই শিল্পীর ক্ষেত্রে সেই সেতুটি হল ‘সুমিকালি’ (ইঙ্ক) চিত্রকলার ভাষা। কালি তৈরির ক্ষেত্রে সুমিকালি জাপানের প্রাচীন এক পদ্ধতি, পার্বত্য অঞ্চলের পাইন গাছের ডালপালা পুড়িয়ে এক বিশেষ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় তা। কুনোইয়োশি এবং সাভিনা চিত্রশিল্পের নানা দিক ও আঙ্গিকে লব্ধপ্রতিষ্ঠ, কিন্তু সাম্প্রতিক কালে চিত্ররচনার মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন সুমিকালি-কে। দু’জনেই আসছেন কলকাতায়, হিন্দুস্থান পার্কের ‘চারুকারু’-তে ১৬ ও ১৭ এপ্রিল দু’দিন ছবি আঁকবেন ওঁরা, কথাসমন্বয়ে থাকবেন অসিত পোদ্দার। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা।

জীবন-নদী

ব্রিটেনের ‘আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ় রিসার্চ কাউন্সিল’ (এএইচআরসি) ও ভারতের ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএইচআর)-এর অর্থানুকূল্যে, কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে করা শিক্ষামূলক ক্ষেত্রসমীক্ষার অংশ হিসাবে তৈরি হয়েছে একটি তথ্যচিত্র, ওয়াকিং বাই দ্য রিভারফ্রন্ট। কলকাতায় গঙ্গার ঘাটগুলি নিয়ে করা এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে হুগলি নদীতীরের জীবন ও সংস্কৃতি: ধর্মীয় স্থাপত্য যেমন, তেমনই বাজার, নিষিদ্ধপল্লি-সহ আরও অনেক কিছু। আগামী ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে তথ্যচিত্রটি, থাকবেন শিল্পী শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা ব্রিটিশ কাউন্সিল-এর ডিরেক্টর দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। রয়েছে আলোচনাচক্রও, সেখানে বলবেন গৌতম ঘোষ গৌতম বসুমল্লিক অশোক বিশ্বনাথন সুমনা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ, এবং তথ্যচিত্রটির পরিচালক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী।

শিল্পময়

সপ্তাহটি আক্ষরিক অর্থে শিল্পময়। আজ ‘বিশ্ব শিল্প দিবস’, সেই উপলক্ষে যোগেন চৌধুরী তাপস কোনার সমীর আইচ হিরণ মিত্র অতীন বসাক প্রমুখের সঙ্গে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় হাঁটবেন লোকশিল্পী, চিত্রগ্রাহক, শিল্পশিক্ষাকেন্দ্র ও শিল্প সংগঠনের সদস্য ও শিল্পপ্রেমীরা, সকাল ৭টায়, রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্ক থেকে দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত। মায়া আর্ট স্পেস গ্যালারিতে গত ১০ এপ্রিল শুরু হয়েছে প্রদর্শনী ‘ক্যালেইডোস্কোপ’, হরেন দাস রবীন মণ্ডল বিজন চৌধুরী প্রকাশ কর্মকার ও সুহাস রায়ের বাছাই চিত্রকৃতি। চলবে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত, দুপুর দুটো থেকে রাত ৮টা। চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে দেখা যাবে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিউবিস্ট আঙ্গিকের চিত্র (ছবি), প্রভাস কেজরীওয়ালের কিউরেশনে; ২৫ তারিখ পর্যন্ত, দুপুর ৩টে-রাত ৮টা। আর যামিনী রায়ের ১৩৭তম জন্মদিন উদ্‌যাপন হল গ্যালারি চারুবাসনায় গত ১২ এপ্রিল, ‘কমিউনিকেশন ২০৭০’-এর আয়োজনে। যামিনী রায় স্মারক বক্তৃতা দিলেন সুমিতা চক্রবর্তী, ছিল পণ্ডিত পার্থ সারথি ও সুকাসা সুজ়ুকি-র যুগলবন্দি, সরোদে ছবিতে।

অন্য পরিচয়ে

একাধারে গায়ক, সুরকার, সঙ্গীত আয়োজক ও পরিচালক তিনি। অন্য দিকে চিত্রশিল্পীও! তুলির টানে মূর্ত সলিল চৌধুরী, সত্যজিৎ রায় থেকে বিশিষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী-নৃত্যশিল্পীরা, বাংলার বাউলও। দেবজ্যোতি মিশ্রের প্রদর্শনী আগে দেখেছে কলকাতা, এ বার তাঁর আঁকা ছবিতে সাজছে নববর্ষের ক্যালেন্ডার। সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশন-এর উদ্যোগ— আগামী কাল ১৬ এপ্রিল বিকাল ৫টায় শোভাবাজার রাজবাড়ির নাটমন্দিরে প্রকাশ পাবে ক্যালেন্ডার ‘গানের ভিতর দিয়ে’, ছয় পাতার দেওয়াল-ক্যালেন্ডারে শিল্পীর আঁকা ছবি— জীবনের নানা মুহূর্তকথা। পরে বৈশাখী সন্ধ্যার গানে শিবাজী চট্টোপাধ্যায় স্বপন বসু ইন্দ্রাণী সেন উপালি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement