দূষণ: গাড়ি চললেই উড়ছে রাস্তার ধুলো। নাগেরবাজারে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার নিরিখে শহরে দূষণের প্রধান উৎস হল পথের ধুলো! আর শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় যেন ‘ধুলো-ক্ষেত্র’। সেখানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) পরিমাণ সহনশীল মাত্রার থেকে ছ’গুণ পর্যন্ত বেশি ধরা পড়েছে!
শহরের বায়ুদূষণ সম্পর্কে রিপোর্টে প্রাথমিক ভাবে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। প্রসঙ্গত, আগামিকাল, মঙ্গলবার জাতীয় পরিবেশ আদালতে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে। সে দিন রাজ্য সরকারের তরফে হলফনামার সঙ্গে ওই রিপোর্টও জমা দেওয়ার কথা।
শহরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতে দূষণের উৎস সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই মতোই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে (নিরি) নিয়োগ করেছিল।
প্রশাসন সূত্রের খবর, তারই প্রেক্ষিতে নিরির তরফে ২০১৭-’১৮ সময়কালে প্রায় দেড় বছর ধরে শ্যামবাজার, মিন্টো পার্ক, মৌলালি, চেতলা-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় দূষণের পরিমাণ কেমন, সে সম্পর্কিত তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। কখনও গ্রীষ্মে, কখনও শীতের মরসুম ধরে চলে এই কাজ।
নিরির জমা দেওয়া প্রাথমিক সেই রিপোর্টই বলছে, শহরের দূষণে (পিএম১০-এর ক্ষেত্রে) পথের ধুলোর অবদান ৩৭.৫ শতাংশ। ভাঙাচোরা রাস্তা ও রাস্তার পার্শ্ববর্তী ধুলোর কারণে পথে বেরোলেই হাঁসফাঁস অবস্থা শহরের! তার পরেই রয়েছে কয়লাজাত দ্রব্য বা জ্বালানির দূষণ, যার পরিমাণ ২৯.৮ শতাংশ। গাছের গুঁড়ি-ডাল-পাতা পোড়ানোর অবদান আবার ১১.৭ শতাংশ এবং অন্য কিছু থেকে দূষণের মাত্রা হল ২১ শতাংশ। অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অবদান আবার কয়লাজাত দ্রব্য বা জ্বালানির (৫৯.৩ শতাংশ), তার পরে যথাক্রমে পাতা, গাছের গুঁড়ি পোড়ানো (১২.৩) এবং রাস্তার ধুলোর (৫.৭)। দূষণে (পিএম২.৫-এর ক্ষেত্রে) অন্য কারণের অবদান হল ২২.৭ শতাংশ।
রিপোর্টের তথ্য এ-ও বলছে, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যান চলাচল, নির্মাণকাজ চলা-সহ একাধিক কারণে শ্যামবাজার মোড়ে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৬৩২.৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ছুঁয়েছে। তার পরেই রয়েছে ডানলপ (৪৫৬), চেতলা (৩৮৪), মৌলালি (৩৭৩)। আবার গ্রীষ্মের থেকে শীতে দূষণের পরিমাণ কোথাও ৪৩২ শতাংশ, কোথাও ২৮০ শতাংশ, কোথাও আবার ১৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে!
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘রাস্তার ধুলোর দূষণ আটকানোর কথা তো কলকাতা পুরসভার। রাজ্যের মতো তারাও এ কাজে পুরোপুরি ব্যর্থ!’’ পুরসভা সূত্রের খবর, রাস্তায় জল দেওয়ার জন্য আপাতত চারটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মাত্র চারটে গাড়ি দিয়ে সারা শহরে কখনওই জল দেওয়া সম্ভব নয়! যদিও মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘রাস্তায় নিয়মিত জল দেওয়া হয়। প্রয়োজনে আরও গাড়ি ব্যবহার করা হবে।’’