সূচনা: সল্টলেকে চালু হল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধনের মতো একটি অনুষ্ঠান। সেই মঞ্চেও উন্নয়ন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন অব্যাহত থাকল বৃহস্পতিবার।
এ দিন পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত ৪.৮ কিলোমিটার পাতালপথে যাত্রী পরিষেবার সূচনা করেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্পগুলির দ্রুত রূপায়ণের জন্য রাজ্য সরকারের সাহায্য চাইলেও প্রকল্প গড়তে দেরির জন্য রাজ্যকে বিঁধতে দ্বিধা করেননি তিনি।
২০০৯ সালে পূর্ব-পশ্চিম পাতালপথ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পরে রাজ্য সরকার যাত্রাপথ বদলের প্রস্তাব দেয়। তাতে প্রকল্পের কাজ তিন বছরের জন্য থমকে যায় এবং প্রকল্পের খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায় বলে এ দিন অভিযোগ করেন রেলমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের অসহযোগিতার জন্য কৃষক ও স্বাস্থ্য বিমার মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঙ্গবাসী বঞ্চিত হচ্ছেন। রাজ্যের স্বার্থে রেলের বিভিন্ন প্রকল্প দ্রুত সম্পূর্ণ করতে মোদী সরকারের ‘তৎপরতা’র কথাও বলেন গয়াল। পুজোর আগে ফুলবাগান পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা সম্প্রসারিত করার দু’বছরের মধ্যে হাওড়া ময়দান থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত সম্পূর্ণ পথে মেট্রো চালু করার সঙ্কল্পের কথা জানান তিনি। এ দিনের অনুষ্ঠানেই কাটোয়া-আজিমগঞ্জ এবং মুনিগ্রাম-নলহাটি শাখায় ১৪০ কিলোমিটার বিদ্যুদয়িত লাইনের সূচনা করেন রেলমন্ত্রী। সেই সঙ্গে হাওড়া স্টেশনে তিন মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। জানান, ২০২১ সালের মধ্যে পূর্ব রেলে বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হবে।
মেট্রো-রাজনীতি
• ২০০৯ সালের ২২ অগস্ট টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া বাজার (কবি নজরুল) স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো পথের উদ্বোধন (৫.৮৫ কিলোমিটার)।
• তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে তিনি ছাড়াও ছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, এবং রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী।
• ওই অনুষ্ঠানে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
• ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল বাম আমলে। ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের সূচনা হয়। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে প্রকল্পের উদ্বোধন হয়।
• তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মেট্রোয় রাজ্য সরকারের অংশিদারি রেলকে দেওয়া হয়।
• এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ উঠেছে মেট্রোর বিরুদ্ধে। যদিও মেট্রো প্রকল্পে জমিজট কাটানো ছাড়াও প্রশাসনিক ভাবে প্রকল্প তৈরির ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্য সরকারের সঙ্গে নিয়ত সমন্বয় রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের প্রশংসা করেন গয়াল। নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্পগুলির জট কাটাতে বাবুলকে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন রেলমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের সহযোগিতার উল্লেখ করে বাবুল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘এখানে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি আসেননি। তাঁরা উপস্থিত থাকলে ভাল হত।’’
আরও পড়ুন: অবশেষে সপ্ন হল সত্যি, এক নজরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো
সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে পাঁচ নম্বর সেক্টর স্টেশন থেকে পতাকা নেড়ে যাত্রী পরিষেবার সূচনা করেন রেলমন্ত্রী। পরে বাবুলকে নিয়ে ওই স্টেশন থেকে মেট্রোয় চেপে সিটি সেন্টার পর্যন্ত যান তিনি।
২০০৯ সালের পরে রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পাতালপথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হল না কেন, সেই বিতর্ক নিয়ে গয়াল বা বাবুল কেউই মুখ খুলতে চাননি। আমন্ত্রণ-বিতর্কে কলকাতার মেয়র ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ববি হাকিম বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই প্রকল্পের বড় অংশ অনুমোদন করেছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ না-জানানোটা অসভ্যতা।’’
আরও পড়ুন: অনেক ‘প্রথম’-এর সাক্ষী, দেখে নিন কী কী থাকছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোয়
মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না-জানানোটাই সমীচীন বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওঁকে কেন ডাকা হবে? উনি কখনও বিরোধীদের সম্মান দেন? ইচ্ছে করে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। রীতি-রেওয়াজ মেনে রেলের প্রতিনিধি নবান্নে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন না, অথচ তা নিয়ে খোঁটাও দেওয়া হবে!’’
২০০৯ সালে টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের অনুষ্ঠানে রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ডাকা হয়নি বলে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী।
উদ্বোধন পর্বে খোঁটা-কাঁটার মধ্যেই পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো জানায়, আজ, শুক্রবার ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে পাতাল-সফরের প্রথম দিকে কিছু যাত্রীকে গোলাপ দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হবে।