বাহিনীকে বেশ কিছু নির্দেশ কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ পন্থের। — ফাইল চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে আরও সতর্ক হল কলকাতা পুলিশ। সেই মর্মে বাহিনীর জন্য নির্দেশিকা জারি করে নতুন কমিশনার মনোজ বর্মা বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই আন্দোলন আর পাঁচটা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে আলাদা। তাঁর কড়া নির্দেশ, ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে বিষয়টি সামলাতে হবে। তবে আপাতত দুর্গাপুজোকেই যে অগ্রাধিকার দিতে চাইছে কলকাতা পুলিশ, তা-ও স্পষ্ট নির্দেশিকা থেকে। আরজি কর এবং পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের আবহে আরও বেশি করে সাধারণ মানুষ, বিশেষত মহিলাদের ‘ভরসাযোগ্য’ হতে চাইছে তারা। সেই কারণে নির্দেশিকায় মনোজ জানিয়েছেন, সহকর্মী থেকে সাধারণ নাগরিক— কোনও মহিলার সঙ্গেই অশালীন আচরণ করা চলবে না পুলিশ কর্মীদের। মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সঙ্গেই ভাল ব্যবহার করতে হবে, যাতে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়।
শনিবার রাত থেকে ধর্মতলায় ১০ দফাত দাবিতে অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, কলকাতা পুলিশকে ইমেল করে বায়ো-টয়লেটের আবেদন জানানো হলেও তা মেলেনি। শুক্রবার পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার অভিযোগও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। এই আবহে কলকাতা পুলিশের নতুন কমিশনার মনোজ সতর্ক করলেন বাহিনীকে। নির্দেশিকায় তিনি স্পষ্ট জানালেন, বাকি ঘটনার সঙ্গে এই আন্দোলনকে মিলিয়ে দিলে চলবে না। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘চিকিৎসকদের বিষয়টি (আন্দোলন) জটিল। এটি সাধারণ আইন-শৃঙ্খলার বিষয় নয়। গোটা বিষয়টির প্রকৃতি বুঝে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সকল অফিসার এবং বাহিনীকে একই ভাবে কাজ করতে হবে।’’ এই বিষয়টি নিয়ে কী ভাবে পদক্ষেপ করতে হবে, তা নিয়েও বার্তা দিয়েছেন মনোজ। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ‘‘অনেক ধৈর্য নিয়ে ঠান্ডা মাথায় এই বিষয়ে পদক্ষেপ করতে হবে। আমাদের খারাপ ভাবমূর্তি তুলে ধরার সুযোগ চিকিৎসক বা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া চলবে না।’’ পাশাপাশি, চিকিৎসকদের একেবারে ‘ছাড়’ দেওয়ারও পাত্র নন মনোজ। নির্দেশিকায় জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের বেআইনি কাজকর্মের নথি-প্রমাণ রাখতে হবে। তাঁদের এই কাজে শামিল অন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও নথি-প্রমাণ রাখতে হবে। কাগজ, ছবি, ভিডিয়ো আকারেই প্রমাণ রাখতে হবে।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। হাই কোর্টেও বার বার ভর্ৎসিত হয়েছে পুলিশ। এই আবহে পার্ক স্ট্রিট থানার ভিতরে মহিলা সিভিক পুলিশকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত তাঁর সহকর্মী পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, থানায় মহিলাদের নিরাপত্তা না থাকলে রাজ্যে কী ভাবে সুরক্ষিত হবেন তাঁরা? এই আবহে পুলিশ কমিশনার মনোজ তাঁর বাহিনীকে মহিলাদের সঙ্গে আচরণ নিয়েও সতর্ক করেছেন। নির্দেশিকায় জানিয়েছেন, সমস্ত পুলিশ কর্মীকে প্রবীণ, মহিলা, শিশুদের সঙ্গে সঠিক আচরণ করতে হবে। পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের পর আরও বেশি করে পুলিশ কর্মীদের সতর্ক করেছেন কমিশনার। নির্দেশিকায় জানিয়েছেন, সহকর্মী মহিলা সিভিক পুলিশ, গ্রিন পুলিশ সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে, তা বুঝতে হবে পুরুষ অফিসারদের। অন্য মহিলাদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
সাধারণ জনগণের সঙ্গে আচরণ নিয়ে বাহিনীকে সতর্ক করেছেন মনোজ। তিনি জানিয়েছেন, কোনও পুলিশকর্মী কারও সঙ্গে অভব্য আচরণ করলে তা নিয়ে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পুজোর ডিউটি নিয়েও কড়াকড়ি করা হয়েছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, দুর্গাপুজোর সময় পুলিশকর্মীরা কোনও মতেই মত্ত অবস্থায় ডিউটি করতে পারবেন না। ডিউটি শেষ হওয়ার পরেও তাঁদের উপর নজর রাখা হবে। এই নিয়ে কিছু অভিযোগ পেয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপি। তাঁর মতে, এক জন পুলিশকর্মীর খারাপ আচরণ গোটা বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। সর্বোপরি দুর্গাপুজোকে অগ্রাধিকার দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন মনোজ। বাহিনীকে তাঁর নির্দেশ, পুজোর সময় পরিকল্পনা এবং পরিস্থিতি বুঝে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।