সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে মণ্ডপ তৈরি করে, ভিড় করে চলছে রং মাখামাখি। নিজস্ব চিত্র।
করোনা সংক্রমণের ভয় কাটিয়ে দু’বছর পরে ফের রঙের উৎসবে মেতে উঠল শহর। ২০২০ সালে দোলের সময়ে করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিচ্ছিল। অনেকেই সে সময়ে সংক্রমণের আশঙ্কায় দোল খেলেননি। ২০২১ সালে করোনার বিধিনিষেধের কারণে শহর ছিল কার্যত রংহীন। তাই এ বার কোভিড-বিধি কার্যত উড়িয়ে গত দু’বছর রং না-খেলার খিদে মিটিয়ে নিল শহর। প্রভাতফেরি থেকে দুপুরে রং মেখে মোটরবাইকের দাপাদাপি— চোখে পড়ল প্রায় সর্বত্রই। দেদার শব্দবাজিও ফেটেছে শহরের
বিভিন্ন প্রান্তে।
শোভাবাজারে সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ছেলেরা দল বেঁধে বেরিয়েছিল রং খেলতে। হাতে আবির, পিচকারি। দলের মধ্যে মাত্র এক জনেরই মুখে ছিল মাস্ক। কিন্তু বন্ধুদের দেখাদেখি রং খেলতে গিয়ে সে-ও খুলে ফেলল সেটা। কোভিডের ভয় উড়িয়ে কাঁকুড়গাছি মোড়ে চলছিল আবির খেলা, সঙ্গে শব্দবাজি। তাঁদের এক জন আবার মুখ থেকে মাস্ক নামিয়ে পরে নিলেন মুখোশ।
সকাল থেকেই পাড়ায় পাড়ায় এ দিন চলল বসন্ত উৎসব। উত্তরের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে রংবেরঙের কাপড়ের মণ্ডপের ভিতরে ভিড় করে চলল রং খেলা। গল্ফ গ্রিনের সেন্ট্রাল পার্কে শুধু একে অপরকে রাঙিয়ে দেওয়াই নয়, সঙ্গে ছিল মিষ্টিমুখ করানোও। রং খেলার সঙ্গে ডিজে বাজিয়ে ছেলেমেয়েদের নাচগান করতে দেখা গেল বেলগাছিয়ায়। বড়বাজারে আবির, রঙে মাতলেন এলাকার বাসিন্দারা।
এ দিন নিউ টাউনের রবীন্দ্রতীর্থে বসন্ত উৎসবে উপস্থিত ছিলেন এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন-সহ হিডকোর আধিকারিকেরা। রবীন্দ্রতীর্থ প্রাঙ্গণ সাতটায় শুরু হয় প্রভাতফেরি। আবির খেলার সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন শতাধিক তরুণ-তরুণী। হয় ডান্ডিয়া নাচও। সল্টলেকের সিজে ব্লকে ফুল আর আবির দিয়ে দোল খেলেন মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। হরিনাম এবং বাউল গান গেয়ে প্রভাতফেরি করেন সল্টলেকের এজে ব্লকের আবাসিকদের একাংশ। চেতলায় নিজের পাড়ার ক্লাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দোল খেললেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। এ দিন রঙের উৎসবে মেতেছিলেন বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায় থেকে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য— সকলেই।
এ দিন বেলা যত গড়িয়েছে, রং মেখে মোটরবাইক নিয়ে হেলমেটহীন চালকদের দাপাদাপির ছবিও দেখা গিয়েছে শহরে। তবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোতায়েন ছিল পুলিশ। সর্বত্রই সতর্ক ছিল পুলিশ-প্রশাসন। তবে প্রতি বছরের মতো সদর স্ট্রিটে বিদেশিদের রং খেলার সেই চিরাচরিত ছবি খুব একটা দেখা যায়নি। করোনা আবহে শহরে বিদেশিদের সংখ্যা অনেকটাই কম। যে কয়েক জন রয়েছেন, তাঁরা এ বার স্থানীয়দের সঙ্গে রং খেলার তেমন আগ্রহ দেখাননি, এমনটাই জানালেন সেখানকার স্থানীয় দোকানদারেরা।
এ দিন পাড়ায় পাড়ায় সকাল থেকে মাংসের দোকানে ছিল লম্বা লাইন। ক্রেতারা জানালেন, দোলের সুযোগে খাসির মাংসের দাম ৭২০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫০-৭৮০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। এ দিন কেষ্টপুর বাজারে খাসির মাংসের দোকানের সামনের লাইন ভিআইপি রোড পর্যন্ত চলে যায়। মানিকতলা বাজারে মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ডাক্তার খাসির মাংস খেতে বারণ করেছেন। কিন্তু দোলের দিনে সেই নিষেধ কি মানা যায়?”
এ বারের দোলযাত্রা হাসি ফুটিয়েছে রেস্তরাঁগুলির কর্তৃপক্ষের মুখেও। রেস্তরাঁ মালিকেরা জানাচ্ছেন, গত দু’বছর দোলের দিনে কার্যত খাঁ খাঁ করেছিল রেস্তরাঁগুলি। তবে এ বার দুপুর হতে না হতেই ভিড় জমতে দেখা যায় অনেক রেস্তরাঁয়। আপাদমস্তক রং খেলে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের এক রেস্তরাঁয় বসে কষা মাংস-রুটি খাচ্ছিল একটি পরিবার। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘শুনছি চিনে ফের করোনা বাড়ছে। আবার লকডাউন হবে? পরের বছর দোলে কেমন অবস্থা থাকবে, তা জানি না। তাই এ বার চুটিয়ে রং খেলে নিয়েছি।’’