প্লাস্টিকের ব্যাগে বই নিয়ে এক ক্রেতা । জলের পাউচে ভরেছে ডাস্টবিন। শুক্রবার, বইমেলায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বিভিন্ন স্টল থেকে বই দেওয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যাগে। ক্রেতারা নিজেরাও বাইরে থেকে নিয়ে আসছেন প্লাস্টিকের প্যাকেট। এ ছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের তৈরি জলের পাউচ, থার্মোকলের থালা। স্টল সাজাতে ফ্লেক্স, ব্যানারের ব্যবহার তো আছেই। তাই গত বছরের তুলনায় প্লাস্টিকের ব্যবহার কমলেও প্লাস্টিকমুক্ত হল না বইমেলা। বইমেলায় প্লাস্টিক নিষিদ্ধ ঘোষণাও করা হয়নি। বস্তুত, বইমেলাকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও আগাম উদ্যোগও চোখে পড়েনি।
বছরভর রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে পুরসভাগুলি প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান ও দূষণ রোধে সচেতনতার প্রচার চালায়। কিন্তু বইমেলার মতো জায়গায় যেখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটছে, সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে আলাদা তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
শুক্রবার একটি প্রকাশনা সংস্থার স্টলে গিয়ে দেখা গেল, প্লাস্টিকের ব্যাগেই বই বিক্রি হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করতেই তাঁরা জানান, সরকারের নির্দেশিকা মেনে ৫০ মাইক্রনের বেশি পুরু প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আগামী বছর থেকে বিকল্প ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। এই বছর থেকেই বিকল্প কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না? একটি
প্রকাশনা সংস্থার এক কর্মকর্তা অলোক দেবনাথ জানান, বিকল্প সামগ্রী দিয়ে ব্যাগ তৈরি করতে গেলে খরচ বেশি পড়ে। সেই খরচ বহন করা মুশকিল হচ্ছে। তবে আগামী বছর থেকে অবশ্যই সেই চেষ্টা করা হবে।
একই যুক্তি শোনা গেল লিটল ম্যাগাজ়িনের প্যাভিলিয়নেও। তবে সেখানে বিক্রেতাদের একাংশ জানান, তাঁরা অনেক দিন আগে থেকেই কাগজ, চটের ব্যাগ ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাতে বিক্রয়মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। তার জেরে অনেক ক্রেতা বই কিনতে এসেও পিছিয়ে যাচ্ছেন।
প্লাস্টিকের ব্যবহার শুধু বই কেনাবেচার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বইমেলার স্টল সাজানোর ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিকজাত সামগ্রী যেমন ফ্লেক্স ও ব্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে। ফুড কোর্টে কাগজের প্লেটের পাশাপাশি থার্মোকলের থালা, পাত্রও চোখে পড়ছে। বইমেলার বিভিন্ন জায়গায় ‘মে আই হেল্প ইউ’ ডেস্ক থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেই প্লাস্টিকের পাউচ থেকে জল খাচ্ছেন। বইমেলার রিং রোডের ধারে রাখা আবর্জনা ফেলার জায়গায় স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে রয়েছে সেই ফাঁকা পাউচ-ই।
বইপ্রেমীদের একাংশের কথায়, নির্দেশিকা অনুসারে ৫০ মাইক্রনের থেকে কম পুরু প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। তা মানা হচ্ছে কি না, সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা মুশকিল। তবে প্লাস্টিকের ব্যাগের সংখ্যা এ বছর বেশ কিছুটা কমেছে। বইপ্রেমীদের একাংশের দাবি, কর্তৃপক্ষ যে ভাবে মেলা চত্বরে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছেন, সে ভাবে প্লাস্টিকও নিষিদ্ধ করুন।
তবে পরিবেশকর্মীরা জানান, প্রশাসনের তরফে শুধু নিয়ম করলেই হয় না। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও প্রয়োজন। সেই পরিবর্তন এক দিনে হবে না। পরিবেশকর্মী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ইতিবাচক অবস্থা বইমেলার। বহু ছোট স্টলেও কাপড় কিংবা কাগজের ব্যাগে বই দেওয়া হচ্ছে। প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ করার
চেষ্টা হচ্ছে।’’
বইমেলা কেন প্লাস্টিকমুক্ত হল না? রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, সার্বিক ভাবে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ নয়। ৫০ মাইক্রনের থেকে কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে প্রচার গুরুত্ব পেয়েছে বইমেলায় তাঁদেরই স্টলে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্কুলপড়ুয়াদের দিয়ে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতার প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করছি।’’
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এ বছর প্লাস্টিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য
ভাবে কমেছে।’’