চেহারা পুরোপুরি পাঠানদের মতো। মাথায় পাগড়ি, গাল ভর্তি দাড়ি, চোখে সুরমা, গলায় পেঁচানো রুমাল, হাতে বালা আর পরনে পাঠান স্যুট। কানে গোঁজা ‘ব্লু টুথ’।
তার উপরে বিমানবন্দরে ঢোকার সময়ে দেখা যায় তাঁর কাছে না আছে বিমানের টিকিট, না অন্য কোনও ছাড়পত্র। সিআইএসএফ জওয়ানেরা পথ আটকালে তিনি হিন্দিতে সরাসরি তাঁদের বলেন, ‘‘টার্মিনালের ভিতরে আমার লোক আছে। ঢুকতে না দিলে টার্মিনাল উড়িয়ে দেব।’’
শনিবার তখন রাত ১১টা। বিমানবন্দরে এই ঘটনার পরে নড়ে বসেন নিরাপত্তা-অফিসারেরা। এমন চেহারার লোক, সঙ্গে রয়েছে ট্রলি ব্যাগ, বলছেন টার্মিনাল উড়িয়ে দেবেন! বিমানবন্দরের দোতলায় ডিপারচার এলাকার ৩এ গেট দিয়ে ঢোকার মুখে তাঁকে ধরেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ অফিসারেরা। ওই ব্যক্তির দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি করে বন্দুক, বোমা, কার্তুজ— মেলেিন কিছুই। ব্যাগটি থেকে মিলেছে ধর্ম সংক্রান্ত কিছু বই ও কাগজ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করেছিল, আফরোজ আলম খান নামে ওই যুবকের মানসিক সমস্যা আছে। কিন্তু, বুক চিতিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে ঢোকার সময়ে টার্মিনাল উড়িয়ে দেওয়ার হুমকিকে হাল্কা ভাবে দেখতে রাজি হননি তদন্তকারীরা। রবিবার দিনভর জেরার পরে রাতে আফরোজকে গ্রেফতার করে জামিনে মুক্তি দেয় বিমানবন্দর থানার পুলিশ।
সূত্রের খবর, শনিবার রাতে আফরোজকে ধরার পরে তাঁকে প্রথমে জেরা করেন সিআইএসএফ অফিসারেরা। খবর পৌঁছয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কানেও। অফিসারদের দাবি, আফরোজ জানান, তিনি ইরাক যাওয়ার বিমান ধরতে এসেছিলেন। কেন ইরাক? আফরোজ নিরাপত্তা অফিসারদের জানান, তিনি সেখানে গিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এ যোগ দিতে চান। কলকাতা থেকে সরাসরি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে কোনও বিমান যায় না। দুবাই, আবুধাবি
বা দোহা হয়ে যেতে হয়। আফরোজের কাছে যদিও কোনও বিমান টিকিটই ছিল না। তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি জানান, বিমানবন্দর থেকে টিকিট কিনে নেবেন। তাঁর সঙ্গে যদিও তেমন টাকাও ছিল না।
বিদেশ যেতে হলে পাসপোর্ট ও ভিসা থাকা বাধ্যতামূলক। আফরোজের কাছে কোনও পাসপোর্টও ছিল না। পুলিশ জানায়, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি তাঁর মোবাইলে রাখা একটি পাসপোর্ট নম্বর দেখান। তাঁর দাবি, সেটাই তাঁর পাসপোর্ট এবং সেই নম্বর দেখালেই কাজ হয়ে যাবে। শনিবারই রাত ৩টে নাগাদ আফরোজকে বিমানবন্দর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁর নামে লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়। রবিবার দফায় দফায় আফরোজকে জেরা করেন নিরাপত্তা-অফিসারেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় আফরোজ নিজের নামের পরে ‘ওরফে বিন লাদেন’-ও বলেছেন। মাঝেমধ্যে রেগেও যাচ্ছিলেন। সে সময়ে হাতের সামনে পেপার-ওয়েট, পেন যা পাচ্ছেন ছুড়তে শুরু করছিলেন। অফিসারদের কথায়, ‘‘থানার ভিতরেই দু’দিকে দুই কনস্টেবলকে আফরোজের পাহারায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল।’’ বেশ কয়েক দফা জেরার পরে আফরোজকে গ্রেফতার করে রাতে তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয় বিমানবন্দর থানার পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, আফরোজের বাড়ি গার্ডেনরিচের রামেশ্বরপুর রোডে। জায়গাটি মেটিয়াবুরুজ থানার অধীনে। আফরোজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করার জন্য মেটিয়াবুরুজ থানাকে জানানো হয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্রে খবর। আফরোজের আটক হওয়ার খবর পেয়ে এ দিন সকালে বিমানবন্দর থানায় এসেছিলেন তাঁর ভাই জামিল আহমেদ খান। তিনিও দাবি করেছেন, আফরোজ মানসিক ভারসাম্যহীন। সেই চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র তাঁকে থানায় পেশ করার জন্য বলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলবে।