অন্যতম দূষিত শহর কলকাতা, বলছে রিপোর্ট

দেশের মধ্যে অন্যতম দূষিত শহর হল কলকাতা! কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমনই বলা হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বায়ুদূষণ। —নিজস্ব চিত্র

দেশের মধ্যে অন্যতম দূষিত শহর হল কলকাতা! কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমনই বলা হয়েছে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা, ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ (এনসিএপি) সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। ওই কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্যই হল, যে ভাবে দেশে বায়ুদূষণ বিপজ্জনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা। পাশাপাশি, ২০২৪ সালের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ জাতীয় স্তরে ২০-৩০ শতাংশ কমানো। সেই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে বায়ূসূচকের স্বাভাবিক মাত্রা লঙ্ঘিত হয়েছে এমন ১০২টি শহরের (মন্ত্রকের তরফে যেগুলিকে ‘নন অ্যাটেনমেন্ট সিটিজ’ বলা হচ্ছে) মধ্যে অন্যতম হল কলকাতা!

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি) -এর তরফে কলকাতার বায়ুদূষণ সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে, শহরে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ কী অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও কোথাও, বিশেষ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়গুলিতে সেই পরিমাণ সহনশীল মাত্রার থেকে প্রায় ছ’গুণ বেশি থেকেছে। নিরি-র সেই রিপোর্টে এটাও দেখানো হয়েছিল যে, শহরের দূষণের পিছনে মূল কারণ হল পথের ধুলো! যদিও প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতার অবস্থা অন্য শহরগুলির তুলনায় অনেকটাই ভাল।’’

Advertisement

কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে, কলকাতা-সহ দেশের সমস্ত শহরের সার্বিক বায়ূদূষণের পিছনে পথের ধুলো ও নির্মাণস্থলের (নির্মাণ ও ভাঙা) দূষণই প্রধান দায়ী। কয়লা বা অন্য জ্বালানি, পাতা, কাঠ পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়ার মতো অন্য কারণগুলিও অবশ্য রয়েছে। পথের ধুলো কমানোর জন্য রাস্তার ডিভাইডারে সবুজের পরিমাণ বাড়ানো, ভাঙাচোরা রাস্তা দ্রুত সারাই করা, রাস্তার ধুলোয় দিনে দু’বার জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা-সহ একাধিক পদক্ষেপ করার কথাও বলা হয়েছে। এক মাস, দু’মাস, ও তিন মাসের মধ্যে ওই পরিকল্পনা কী ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে, তার উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।

আরও পড়ুন: ‘বাড়ির পোষা কুকুরটাকে খুবই ভালবাসে মৌটুসি!’

মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সংগৃহীত নানা সমীক্ষার তথ্য থেকে দেখা গিয়েছে, দূষণের জন্য শহরভিত্তিক কর্মসূচি অনেক বেশি কার্যকর। শহরভিত্তিক পরিকল্পনা করেই চিনের বেজিং ও দক্ষিণ কোরিয়ার সোলে পাঁচ বছরের সময়সীমার মধ্যে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ৩০-৪০ শতাংশ কমেছে। আবার এ ধরনের পরিকল্পনা দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে, অর্থাৎ, ২২-২৫ বছরের মেয়াদে বাস্তবায়িত করায় চিলির সান্তিয়াগো ও মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটিতে পিএম ২.৫ ও পিএম ১০-এর পরিমাণ যথাক্রমে ৭৩ ও ৬১ শতাংশ হারে কমানো গিয়েছে।

মন্ত্রকের সূত্র এ-ও জানাচ্ছে, চিনের বায়ুদূষণের উপরে করা ‘পিকিং ইউনির্ভাসিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথ’-এর একটি সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, বায়ূদূষণ রোধে কর্মসূচি (‘এয়ার পলিউশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল প্ল্যান’, ২০১৩-২০১৭) বাস্তবায়িত করেই সে দেশের ৭৪টি প্রধান শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তাই স্বল্পকালীন (পাঁচ বছর) ও দীর্ঘকালীন (২০-২৫ বছর) মেয়াদের ভিত্তিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের উপরে গুরুত্ব দিচ্ছে মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘আর কথা বলা নয়। দূষণ রোধে এ বার কাজ করার সময় চলে এসেছে। রাজ্য ও শহরভিত্তিতে কী ভাবে এনসিএপি বাস্তবায়িত করা যায়, সেটাই এখন মূল উদ্দেশ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement