রক্ষাকবচ: চিনা মাঞ্জা থেকে বাঁচতে শুরু হল মা উড়ালপুল ঘিরে দেওয়ার কাজ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ প্রস্তাব দিয়েছিল ছ’মাসেরও বেশি আগে। এত দিনে সেই প্রস্তাব কার্যকর হতে চলেছে। চিনা মাঞ্জার ফাঁদ থেকে যাত্রীদের রক্ষা করতে শুরু হল মা উড়ালপুলের রেলিংয়ের উপর থেকে ঘিরে দেওয়ার (ফেন্সিং) কাজ।
বুধবার রাত থেকেই সেই কাজ শুরু হয়েছে বলে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) সূত্রের খবর। ১৪ দিনের মধ্যে উড়ালপুলের একটি লেনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে। প্রস্তাব পাওয়ার এত দিন পরে কাজ শুরু করা নিয়ে কেএমডিএ-র অবশ্য যুক্তি, বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি অনুমতি আদায়ের বিষয় ছিল। সেই পর্ব মিটতেই দরপত্র ডেকে কাজ শুরু হয়েছে।
সূত্রের খবর, মা উড়ালপুলকে দু’টি ভাগে ভাগ করে উপর থেকে ঘিরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই মতো প্রথম পর্বে সায়েন্স সিটি থেকে পার্ক সার্কাসমুখী লেনের বাঁ দিক ঘেঁষে কাজ শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, আপাতত বোট ক্লাব থেকে চার নম্বর সেতু পর্যন্ত উড়ালপুলের অংশটি ঘেরা হবে। দু’ধারের রেলিংয়ের উপরে চার মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ঘিরে দেওয়া হবে। উড়ালপুলের মাঝামাঝি অংশে অবশ্য এই উচ্চতা হবে পাঁচ মিটার।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, প্রথম পর্বে ১৪ দিন ধরে পার্ক সার্কাসমুখী লেনে কাজ হবে। রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কাজ চলবে। লালবাজারের এক ট্র্যাফিককর্তা জানিয়েছেন, করোনা প্রতিরোধে রাজ্য প্রশাসনের বিধিনিষেধ চলছে। ফলে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত উড়ালপুলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই ওই সময়েই যাবতীয় কাজ করতে বলা হয়েছে। ওই লেনের কাজ শেষ হলে দ্বিতীয় পর্বে সায়েন্স সিটিমুখী লেনের কাজ শুরু হওয়ার কথা।
যদিও ১৪ দিনে একটি লেনের কাজ শেষ হবে কি না, তা এখনই বলতে পারছেন না কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা। সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘যে হেতু এই কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তাই কত দিন লাগবে, এখনই সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আপাতত ১৪ দিনে শেষ করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। সেই মতো পুলিশের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, চিনা মাঞ্জায় মা উড়ালপুলে দুর্ঘটনা নতুন নয়। শুধু গত তিন মাসেই উড়ালপুলে ওই মাঞ্জা সুতোয় আহত হয়েছেন ১০ জনের বেশি মোটরবাইক আরোহী। অথচ, দুর্ঘটনা আটকাতে উড়ালপুলের উপরে পুলিশি নজরদারি থাকে। সেই সঙ্গে আশপাশের এলাকা থেকেও ঘুড়ি ওড়ানোর বিষয়ে নজরদারি চালানো হয় বলে দাবি কলকাতা পুলিশের। তবুও দুর্ঘটনায় রাশ টানা যাচ্ছে না। সেই কারণেই উড়ালপুলটিকে চিনা মাঞ্জার হাত থেকে মুক্ত করতে চলতি বছরের মার্চ মাসে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ রেলিংয়ের উপর থেকে উড়ালপুল ঘিরে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এ জন্য মা উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কেএমডিএ-কে সেতুর দু’পাশ ঘিরে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় জুনেও ফের এক বার ওই সংস্থাকে প্রস্তাব পাঠায় কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। চার এবং পাঁচ মিটার উচ্চতার জালের ভার ধরে রাখতে রেলিংয়ে বসানো হয়েছে অনেকগুলি লোহার বিম। উড়ালপুল সেই ভার বহন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রথমে ধন্দে ছিলেন কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা। একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে পরীক্ষামূলক ভাবে সেতুর ২৫ মিটার অংশে ওই কাজ করা হয়েছিল। এর পরই সেতুর বাকি অংশের কাজ শুরু করা হয়েছে।