প্রতীকী ছবি।
কেএমডিএ-র বিভিন্ন আবাসনে যে সব ফ্ল্যাট রয়েছে, সেগুলির মালিকানা নিয়ে অনেক দিন ধন্দেই ছিলেন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি যে সমীক্ষা করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, আবাসনগুলির প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ ফ্ল্যাটই ‘বেহাত’ হয়ে গিয়েছে। ফলে, আবাসন নিয়ে ফাঁপরে পড়েছে কেএমডিএ।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কেএমডিএ-র আবাসনগুলি নিয়ে প্রচুর সমস্যা রয়েছে। তাই ওই সব ফ্ল্যাটের আসল মালিকদের খোঁজ করে, তাঁদের ওই ফ্ল্যাটগুলি কিনে নেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছেন। এই বিষয়টি খুঁজতে গিয়েই দেখা গিয়েছে অধিকাংশ ফ্ল্যাটের মালিককে পাওয়াই যাচ্ছে না। ফলে, সামগ্রিক সংস্কারের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে রয়েছে।’’
কেএমডিএ সূত্রের খবর, আশির দশকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় তৎকালীন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ (কেআইটি) একাধিক আবাসন তৈরি করে। সেই সময়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মী ছাড়াও যাঁরা কর্মী নন, তাঁদেরও ওই আবাসনের ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে, ওই সমস্ত আবাসনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ভাড়া দিতেন না। এমনকি, কেআইটির নথিতে যাঁরা আসল ভাড়াটে, তাঁদের অনেকেই নিজেদের ফ্ল্যাটে অন্যকে থাকতে দিয়ে চলে গিয়েছেন বলেই অভিযোগ। ফলে, এখন আসল মালিককে না পাওয়ায় আইনি জটিলতায় ওই ফ্ল্যাটগুলি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। অন্য দিকে যৎসামান্য ভাড়া পেয়ে অথবা একেবারেই ভাড়া না পেয়ে ওই সব ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণে খরচও জোগাড় করতে সমস্যায় পড়ছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, সংস্কারের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটলে তখন দায় পড়বে কেএমডিএরই।
বামফ্রন্ট আমলেও ওই সব আবাসন ফ্ল্যাটমালিকদের হস্তান্তরের করার চেষ্টা হয়। সেই সময়ে অনেক বার বলা সত্ত্বেও কেউ আবাসন ছেড়ে যাননি।
কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১৬ সালে কেআইটি এবং কেএমডিএ যুক্ত হয়। তার পরে কেএমডিএ-র অধীন ফ্ল্যাটের মোট সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারটি। সম্প্রতি কেআইটির তৈরি ওই আবাসনগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও বিতর্ক উঠেছিল। পরে অবশ্য রাজ্যের মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, দু’টি সংস্থা যুক্ত হয়ে যাওয়ায় আইনত রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি কেএমডিএ-ই দেখাশোনা করবে। শুধু তা-ই নয়, পূর্বতন কেএআইটির প্রকল্পের কয়েকটি রাস্তা কলকাতা পুরসভাও দেখবে। বাকিটা রক্ষণাবেক্ষণ করবে কেএমডিএ। তবে ওই আবাসনগুলির ভিতরের রাস্তার দায়িত্বে থাকবে কেএমডিএ নিজেই।
নগরোন্নয়ন দফতরের কর্মী সংগঠন উন্নয়ন সংস্থা যুগ্ম সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রাণবন্ধু নাগ বলেন, ‘‘ওই আবাসনগুলি থেকে সরকারের কোনও রোজগার নেই। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে খরচ তাতে অন্য কাজ আটকে যায়। শুধু নির্দেশিকা দিলেই হবে না। কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে।’’