জল অপচয় রুখতে মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার আবাসিক বাড়ির পরিচারিকাদের সচেতন করতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। ইতিমধ্যে উত্তর কলকাতায় ওই কাজ হয়েছে।
তাতে সাফল্য এসেছে বলেই দাবি করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, পুরসভার ‘জলবন্ধু’ প্রকল্পের অন্তর্গত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়েই কাজ শুরু হবে। সেই সচেতনতা প্রকল্পে সামিল করা হবে পরিচারিকাদেরও।
আজ, শুক্রবার বিশ্ব জল দিবস। কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার বিভাস মাইতি জানান, এই বছর বিশ্ব জল দিবসের থিম ‘লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’ (সবাই যাতে জল পান)। শহরে পানীয় জল সকলের মধ্যে সরবরাহ করতে হলে যে কোনও মূল্যে তার অপচয় বন্ধ করা প্রয়োজন। বিভাসবাবুর কথায়, ‘‘সচেতনতা যতক্ষণ না গড়ে উঠছে, তত ক্ষণ জলের মিটার বসিয়েই হোক বা অন্য ব্যবস্থা নিয়েই হোক, প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না। শহরে যে পরিমাণ পানীয় জল নষ্ট হয় তা সংরক্ষণ করতে পারলে অন্য পুরসভাকেও জল সরবরাহ করা যেতে পারে।’’
পুর কর্তৃপক্ষ মনে করেন, জল অপচয় হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখতে পারেন বাড়ির পরিচারিকারাই। তাই তাঁদের ‘জলবন্ধু’ প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। কলকাতার টালা সংলগ্ন চিৎপুর এলাকায় পানীয় জলের অপচয় বন্ধ করার ‘পাইলট প্রজেক্ট’ ইতিমধ্যেই সফল হয়েছে বলেই দাবি করেছে পুরসভা।
বিভাসবাবুর দাবি, টালা ট্যাঙ্ক সংলগ্ন চিৎপুর এবং কাশীপুর এলাকায় এই বিষয়ে যে পাইলট প্রজেক্ট করা হয়েছিল সেখানে পরিচারিকাদের পানীয় জল অপচয়ে বড় ভূমিকা ছিল। পাইলট প্রজেক্ট থেকে সমীক্ষার যে রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে তা থেকে জানা গিয়েছে, জল অপচয় বন্ধ করার ফলে ওই এলাকায় গড়ে প্রতিদিন ৩০০ লিটার জল খরচ হচ্ছে। যেখানে আগে, গড়ে ওই এলাকায় রোজ ৪৯৪ লিটার জল খরচ হত।
কিন্তু কেন পরিচারিকাদের সচেতনতার জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে?
জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক জানান, ঘরের মধ্যে পরিচারিকাদের প্রবেশ যতখানি সহজ পুরসভার কর্মী বা আধিকারিকদের পক্ষে সব সময় প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ফলে পরিচারিকারা সচেতন হলে বাড়ির লোকজনকে তাঁরাই জল অপচয় প্রসঙ্গে সচেতন করতে পারবেন। পুর কর্তৃপক্ষ জানান, উত্তর কলকাতায় ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ৬ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় জলের অপচয় বন্ধ করতে বাড়ি বাড়ি মিটার বসিয়ে জলের অপচয় দেখা ছাড়াও লেটার বক্সে চিঠি ফেলে সচেতন করার কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছিল।
বিভাসবাবু জানান, অনেক আগেই পুরসভা ২৪ ঘণ্টা সারা শহরে জল সরবরাহের উপরে লক্ষ্য রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু জল অপচয়ের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে উত্তর কলকাতার যে এলাকায় সমীক্ষা করা হয়েছিল সেখানে দিনে প্রায় ১৮ ঘণ্টা জল সরবরাহ করা হয়। সেখানে অন্য জায়গায় সরবরাহের সময় কম। দিনে প্রায় ১০ ঘণ্টা। সরবরাহে সমতা আনতেই জল অপচয় বন্ধের প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।