বইপোকা: পাঠে মগ্ন পথচারী। ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কে। নিজস্ব চিত্র
পার্কে হাঁটতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বেঞ্চে জিরোচ্ছেন। হঠাৎই হাতের নাগালে পেয়ে গেলেন থরে থরে সাজানো বই এবং মাসিক পত্রিকা। তারই পছন্দ মতো একটি টেনে পাতা উল্টে খানিক মনের বিনোদনও করতে পারেন, বিশ্রামের ফাঁকে। হাঁটার মাঝে এমন অবসর যাপনে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্ট্রিট লাইব্রেরি’ বা পথ-গ্রন্থাগার।
এ শহরে শুরুটা হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। সম্প্রতি এমনই আরও কয়েকটি পথ-গ্রন্থাগার তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে এক বেসরকারি সংস্থা। কলকাতা পুরসভার অনুমোদন নিয়ে প্রায় বছর খানেক আগে তারা কাজও শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ভবানীপুরের নর্দান পার্কে এবং পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে এবং দেশপ্রিয় পার্কে এমন গ্রন্থাগার তৈরি করেছে ওই বেসরকারি সংগঠন।
এ শহরের পার্কে গ্রন্থাগার, নতুন উদ্যোগ নয়। কয়েক বছর ধরেই উত্তরের জগৎ মুখার্জি পার্কে এক নিরাপত্তারক্ষীর উদ্যোগে হয়েছে এমন গ্রন্থাগার। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের বই দিয়ে পার্কের ওই গ্রন্থাগার সাজাতে সহযোগিতাও করেছেন।
এর পরেই পুরসভার উদ্যান দফতর যৌথ ভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় এমন উদ্যোগের প্রসার ঘটাতে সচেষ্ট হয়েছে। এমন গ্রন্থাগার তৈরি করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট এলাকা বেছে কলকাতা পুরসভার কাছে আবেদন জানাতে হয় উদ্যোগীকে। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘দক্ষিণ কলকাতায় দেশপ্রিয় পার্কে এই ধরনের পথ-গ্রন্থাগার করা হয়েছে। নর্দার্ন পার্কে রাস্তার উপরেই রয়েছে এমন ব্যবস্থা। পথচলতি মানুষ হাতে বই নিয়ে পড়েনও। তাঁদের উৎসাহ দেখে আরও অনেক পার্কে পুরসভা বেসরকারি সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কথা ভাবছে।’’
মহানির্বাণ রোডের বাসিন্দা অনিল দত্ত বলেন, ‘‘আমার বয়স সত্তরের উপরে। দেশপ্রিয় পার্কে রোজই বেড়াতে আসি। হাঁটার পরে তাক থেকে পছন্দ মতো বই বেছে কোনও বেঞ্চে বসে পড়ি। আসার আগে বইটি আবার যথাস্থানে রেখে দিই। ওখানে বসেই তো আর্থার হ্যালির উপন্যাস শেষ করে ফেলেছি।’’
সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্রন্থাগারিক মনোজ সাউ বলেন, ‘‘নাগরিকদের মধ্যে বইয়ের প্রতি ভালবাসা এবং তা পড়ার অভ্যাস ছড়িয়ে দিতেই বিভিন্ন এলাকায় এমন স্ট্রিট লাইব্রেরি তৈরি করছে সংস্থা। কয়েকটি তৈরিও হয়ে গিয়েছে। বইগুলি এমন ভাবে রাখা হয়েছে, যাতে বৃষ্টির ছাঁট বা রোদ সে সবের ক্ষতি করতে না পারে। এমনকি সেগুলি ধুলো থেকে বাঁচাতে পর্দা দেওয়া হয়েছে।’’ খোলা জায়গায় বই রাখলে চুরির আশঙ্কা তো থাকে! মনোজবাবু জানাচ্ছেন, সচরাচর বই চুরি হয় না। কেউ নিলে বুঝতে হবে সংস্থার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তাঁর দাবি, “এমন কিছু ঘটলে সংস্থা ওই লাইব্রেরিতে ফের বই দেবে।”