প্রতীকী ছবি।
মশা মারার ফগিং (ধোঁয়া) মেশিন বাড়িয়ে দেয় বায়ুদূষণ। তাই এ বার স্পেনে তৈরি ধোঁয়া ছড়ানোর যন্ত্রের খোঁজ করছে কলকাতা পুরসভা। তবে মশা মারতে এই যন্ত্র কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন পরীক্ষা করে দেখতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুজোর পর থেকেই শহরের বাতাসের মান নিম্নগামী। কখনও কখনও দূষণের পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, তা ছুঁয়ে ফেলছে দেশের দূষণ-রাজধানী দিল্লিকেও। তাই শীতে শহরের বাতাসের মান যাতে আরও খারাপ না হয়, সে কারণে আপাতত মশা মারতে ধোঁয়া ছড়ানো বন্ধ রাখা হয়েছে। খুব প্রয়োজন না হলে ধোঁয়া দেওয়ার ওই যন্ত্র ব্যবহার করছে না পুরসভা। কারণ পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, ওই যন্ত্র থেকে বেরোনো ধোঁয়ায় বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। দূষণ না বাড়িয়ে যাতে মশা মারতে প্রয়োজন মতো ধোঁয়া দেওয়া যায়, এ বার তেমন বিদেশি যন্ত্রের খোঁজ শুরু করেছে পুরসভা। কিছু দিন আগে জার্মানিতে গিয়ে স্পেনের তৈরি বিশেষ ফগিং যন্ত্রের খোঁজ পান ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। তিনি জানান, স্পেনে তৈরি ওই যন্ত্র জল দিয়ে চলে এবং তা থেকে ধোঁয়াও বেরোয় না।
অতীনবাবু বলছেন, ‘‘বর্তমানে বায়ুদূষণ যাতে না বাড়ে, তাই ধোঁয়া ছড়ানো বন্ধ রেখেছি। কিন্তু স্পেনে এক রকম যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে, যা থেকে দূষণ ছড়ায় না। অথচ ফগিংয়ের কাজও হয়। সেই যন্ত্রের বিবরণ, দাম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি। স্পেনের ওই সংস্থাকে ই-মেলও করছি। শুধু আমরাই নয়, ঢাকার মেয়রও ওই যন্ত্র সম্পর্কে জানতে বিশেষ উৎসাহী।’’ তবে স্পেনে ওই যন্ত্র কার্যকর হলেও কলকাতার আবহাওয়ায় তার সাহায্যে মশা মরবে কি না, তা পরীক্ষা সাপেক্ষ বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা। কারণ, শুধু ভারতেই নয়, এশীয় দেশগুলিতে মশার দাপট তুলনামূলক ভাবে বেশি। সেই সঙ্গে এরা দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে বলে জানাচ্ছেন পতঙ্গবিদেরা।
সাধারণ ফগিং যন্ত্র থেকে কী ভাবে দূষণ হয়? পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, ধোঁয়া দেওয়ার যন্ত্রে জৈব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ডিজেলচালিত হওয়ায় এই যন্ত্র চালালে প্রচুর ধোঁয়া বেরোয়, যা বাতাসের মানের অবনমন ঘটায়। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘একেই শুনছি, শহরের বাতাসের মান খারাপ হচ্ছে। তাই ফগিং করে আরও একটা দূষণের উৎস তৈরি করতে চাইছি না।’’
কিন্তু ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে এমন এলাকায় যে ‘এরিয়া ফগিং’-এর প্রয়োজন রয়েছে, তা স্বীকার করছেন বিশেষজ্ঞেরা। মশার লার্ভা নয়, বরং পরিণত মশা মারার জন্য ফগিং করার কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তো বটেই, ভারতের ‘ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজ়িজ় কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর তরফেও সুপারিশ করা হয়েছে। পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘‘খালি জায়গায় ধোঁয়া দিলে কোনও লাভ হয় না। কারণ, ধোঁয়ায় মশা রাস্তা থেকে উড়ে বাড়িতে ঢুকে আসে। অপেক্ষাকৃত ঘিঞ্জি বা অন্ধকার জায়গায় সতর্কতার সঙ্গে ধোঁয়া ছড়ালে লাভ হয়। সে ক্ষেত্রে বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখতে হবে।’’
পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি এখন শুধুই এশীয় দেশগুলির সমস্যা নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের হাত ধরে ডেঙ্গি এখন সারা বিশ্বেরই বিপদ। কারণ, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার হার ঊর্ধ্বমুখী। ফলে আগে তাপমাত্রা কম থাকায় যে সব জায়গায় মশা জন্মাতে পারত না, এখন সেখানে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মশা সহজেই বংশবিস্তার করতে পারছে। তাই মশাবাহিত ডেঙ্গি-বিপদের সঙ্গে লড়তে ইউরোপ
থেকে আমেরিকা, সকলেই উদ্বিগ্ন। মশার দাপটে ব্যতিব্যস্ত স্পেনকে নতুন ওই ফগিং যন্ত্র আবিষ্কার করতে হয়েছে। অতীনবাবুর কথায়, ‘‘আমরা কী ভাবে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করছি, কোন পরিবেশে ডেঙ্গি হয়, অন্য দেশের মেয়রেরা জার্মানিতে তা জানতে চেয়েছিলেন। তাঁরাও ডেঙ্গি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত।’’