কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভার রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎসই হল সম্পত্তিকর। অথচ, শহরবাসীর একটি বড় অংশ বছরের পর বছর কর বকেয়া রেখে দিচ্ছেন। বর্তমানে যার পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বকেয়া কর আদায়ে পুর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে ‘ওয়েভার স্কিম’ (বকেয়া টাকার সুদ ও জরিমানায় ছাড়) চালু করা সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ করখেলাপি করের টাকা মেটাতে এগিয়ে আসেননি। তার পরেও করদাতাদের উৎসাহ দিতে চারটি ধাপে কর মকুবের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কিন্তু তা-ও করখেলাপিদের থেকে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।
পুরসভার কর-রাজস্ব বিভাগ সূত্রের খবর, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে সম্পত্তিকর আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮৯০ কোটি টাকা। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে আদায় হয় ১১০০ কোটি টাকা। আর ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদায়ের পরিমাণ ১০৬৯.৩৬ কোটি টাকা। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষের ১ এপ্রিল থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সম্পত্তিকর আদায় হয়েছিল ৯৭৮.৮১ কোটি টাকা। আর চলতি, অর্থাৎ ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে ওই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ১০৬৯.৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত অর্থবর্ষের তুলনায় আদায় বেড়েছে মাত্র ৯.২৫ শতাংশ। কর-রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বকেয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধাপে ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও গত অর্থবর্ষের তুলনায় আদায় বিশেষ বাড়েনি।’’
অতীতেও বিপুল পরিমাণ বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে ওয়েভার স্কিম চালু করা হয়েছিল। মাসকয়েক আগে আবার চার ধাপে বকেয়া মোটা সম্পত্তিকরে ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে নাগরিকদের। জানা গিয়েছে, দশ বছর বা তারও বেশি দিনের বকেয়ার ক্ষেত্রে সুদ ও জরিমানায় যথাক্রমে ৩৫ এবং ২৫ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছরের বেশি, অথচ দশ বছরের কম সময়ের বকেয়ার ক্ষেত্রে সুদ ও জরিমানায় যথাক্রমে ৪০ এবং ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দু’বছরের বেশি, কিন্তু পাঁচ বছরের কম পুরনো বকেয়ার ক্ষেত্রে সুদ ও জরিমানায় যথাক্রমে ৪৫ এবং ৭৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর দু’বছরের কম পুরনো বকেয়ার ক্ষেত্রে সুদ ও জরিমানায় যথাক্রমে ৫০ এবং ৯০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে।
সম্প্রতি পুরসভার বাজেট অধিবেশনে বাম পুরপ্রতিনিধি মধুছন্দা দেব প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘যাঁরা নিয়মিত সম্পত্তিকর দিচ্ছেন না, তাঁদের তালিকা প্রকাশ করুক পুরসভা। মোটা টাকার করখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ কেন তাঁদের ছাড়ের সুযোগ করে দিচ্ছেন?’’ যার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছিলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় সম্পত্তিকর আদায় ভাল হয়েছে। মোটা টাকার করখেলাপিদের থেকে ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। সম্পত্তিকর আদায়ে জোর দিতে পুরসভা কর্মীদের বিশেষ পুরস্কার দেবে।’’