নিউ মার্কেটের হাডকো ভবনের তেতলায় এ ভাবেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে যন্ত্রপাতি। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলছেন, আধুনিক মানের পুর পরীক্ষাগার সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত। অথচ সম্প্রতি নিউ মার্কেটের হাডকো ভবনের তেতলায় গিয়ে দেখা গেল, ওই কাজ অর্ধেকও হয়নি!
আধুনিক মানের ওই খাদ্য পরীক্ষাগারটি তৈরি করতে কলকাতা পুরসভা দরপত্র আহ্বান করেছিল তিন বছর আগে। ঠিক হয়েছিল, নিউ মার্কেটের হাডকো ভবনের তেতলায় প্রায় চার হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে তৈরি হবে সেটি। কিন্তু তিন বছর পরেও দেখা যাচ্ছে, কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কেন এত ঢিমেতালে কাজ, তার স্পষ্ট উত্তরও মেলেনি পুরসভার তরফে।
হাডকো ভবনের তেতলায় গিয়ে চোখে পড়েছে, এ দিক-ও দিকে ছড়িয়ে রয়েছে লোহার যন্ত্রপাতি ও বস্তাবন্দি নানা সামগ্রী। ওই ভবনের জনৈক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘অত্যন্ত ধীর গতিতে কাজ হচ্ছে। কবে শেষ হবে ঠিক নেই।’’
প্রসঙ্গত, শহরের বিভিন্ন রেস্তরাঁ ছাড়াও রাস্তার ধারের দোকানগুলিতে বিক্রি হওয়া খাবারের গুণমান নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে পুরসভার ফুড সেফটি বিভাগের উপরে। তাদের অধীনেই রয়েছে মির্জা গালিব স্ট্রিটের সেন্ট্রাল ফুড ল্যাবরেটরি। কিন্তু সেটির পরিকাঠামোগত খামতি থাকায় বছর পাঁচেক আগে উন্নত মানের আর একটি পরীক্ষাগার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। এই কাজের জন্য চতুর্দশ অর্থ কমিশনে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পরেও কাজ শেষ না হওয়ায় খাবারের নমুনা পরীক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করছেন পুর স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা।
তাঁরা জানাচ্ছেন, মির্জা গালিব স্ট্রিটের ওই পরীক্ষাগারটি এখনও ‘ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিজ়’-এর (এনএবিএল) স্বীকৃতি পায়নি। সেখানে অভাব রয়েছে উন্নত যন্ত্রপাতির। সব চেয়ে বড় কথা, জৈবিক (মাইক্রোবায়োলজিক্যাল টেস্ট) পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ খাবারের নমুনা পাঠাতে হচ্ছে এন্টালির কনভেন্ট লেনে স্টেট ড্রাগ্স কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে (এসডিআরএল)।
পুরসভার এক ফুড ইনস্পেক্টরের কথায়, ‘‘খাবারে কোনও ভারী ধাতু আছে কি না, তা-ও যাচাই করতে পারবে হাডকো ভবনের এই পরীক্ষাগার।’’ এক পুর আধিকারিক আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘‘খাবারে প্রোটিন ও ফ্যাটের অনুপাত ঠিক আছে কি না, সেই পরীক্ষার পর্যন্ত ব্যবস্থা নেই কেন্দ্রীয় খাদ্য পরীক্ষাগারে। ফলে অধিকাংশ খাবারের নমুনা এন্টালিতে পাঠানো হয়। এ জন্য সেখানেও ক্রমশ চাপ বাড়ছে।’’
যদিও পুরসভার সচিব হরিহরপ্রসাদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক এবং লকডাউনের কারণে মাঝে কিছু দিন কাজের গতি থমকে গিয়েছিল। এখন আবার দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে, শীঘ্রই এই পরীক্ষাগারটি তৈরি হয়ে যাবে।’’