বেহাল: বিক্রমগড় ঝিলের পাশে জমা আবর্জনা। ছবি: সুদীপ ঘোষ
কোথাও ফাঁকা জমি ভরেছে জঞ্জালে। কোথাও প্লাস্টিকে আবর্জনা ভরে পুকুরে ফেলার অভিযোগ উঠছে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে ওই এলাকারই অন্য অংশের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভা বা স্থানীয় কাউন্সিলর নজর না দেওয়ায় আবর্জনাই পরিষ্কার হচ্ছে না। অন্য দিকে, স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রশ্ন, মানুষ সচেতন না হলে কত পরিষ্কার হবে আর নজরদারি চলবে?
দু’পক্ষের এই দোষারোপের চাপে কলকাতা পুরসভার সংযুক্ত একাধিক এলাকার পরিবেশ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। অভিযোগ, কিছু মানুষের সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে। সে ছবি ধরা পড়ছে কলকাতা পুরসভার দক্ষিণ শহরতলির কয়েকটি ওয়ার্ডে। ওই সব ওয়ার্ড থেকে সম্প্রতি একাধিক বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সেগুলির মধ্যে ৯৭, ৯৯, ১২২, ১৩০, ১৩১ এবং ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডকে পুরসভা স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিতও করেছে।
তবে চিহ্নিত করাই সার। অভিযোগ, গত কয়েক মাসে ওই সব এলাকা পরিষ্কার হচ্ছে না, প্রচারও হচ্ছে না। এমনকি, মশা মারার তেল যে দেওয়া হত তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে বেলা বাড়তেই মশার দৌরাত্ম্য বাড়ছে। কোথাও আবার বাসিন্দারা মশার আতঙ্কে জানলা এবং গ্রিলের গেটেও নেট লাগিয়েছেন।
পুকুর, ফাঁকা জমি এবং নিকাশিনালা পরিষ্কার না হওয়ার চিত্রও ধরা পড়েছে একাধিক ওয়ার্ডে। যেমন, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পর্ণশ্রী এলাকায় কয়েকটি পুকুর রয়েছে। এখনও সেখানে পড়ে প্রতিমার কাঠামো। ফলে সব মিলিয়ে পুকুরগুলি মশার আঁতুর হয়ে উঠেছে। বছর খানেক ধরে ওই এলাকার জঞ্জাল অপসারণ মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নিকাশির বেহাল অবস্থা ১২২ নম্বর ওয়ার্ডের হরিদেবপুর-সোদপুরে। নিকাশির অব্যবস্থার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে যায় আজাদগড় সংলগ্ন ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে চলতি বছরে ডেঙ্গি আক্রান্ত শ’খানেক।
স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত নয় অথচ অপরিচ্ছন্নতার তালিকায় রয়েছে হরিদেবপুর তথা ১১৫ নম্বর ওয়ার্ড। ওই এলাকার ফাঁকা জায়গা এবং পুকুরে জঞ্জাল ফেলে স্থানীয়েরা দূষণ ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। সেই তালিকায় রয়েছে দশ নম্বর বরোর অধীন ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিক্রমগড়। সেখানে রাস্তার দু’পাশের ঝিলে প্লাস্টিক বোঝাই আবর্জনা পড়ে থাকে। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত স্বীকার করেছেন, কয়েকশো মানুষের ডেঙ্গি হওয়ার কথা। তবে গত বারের তুলনায় এ বার আক্রান্ত কম বলে তাঁর দাবি।
১২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোমা চক্রবর্তী থেকে তপন দাশগুপ্তের অভিযোগ, পুরসভা সকালেই জঞ্জাল তুলতে বাড়ি বাড়ি গেলেও কিছু বাসিন্দা সেখানে ফেলেন না। আবর্জনা পরিত্যক্ত জায়গা বা পুকুরে ফেলেন তাঁরা। নর্দমা বা পুকুর ধারে পড়ে থাকে তোশকও।
পুর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘‘শহরতলির ওয়ার্ডগুলির ফাঁকা জমি ও পুকুরে আবর্জনা ফেলায় মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। পুরসভা পরিষ্কারের চেষ্টা করে। অনেক সময়েই জমি বা পুকুরের মালিক বাধা দেন। এ ধরনের কাজে দেদার সরকারি টাকাও খরচ করতে আইনত বাধা রয়েছে। পড়ে থাকা ফাঁকা জমি বা পুকুর অধিগ্রহণ করে পরিষ্কার করতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’’