দূষণ রোধে কয়লার তন্দুর বন্ধের চেষ্টা

মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, কাঠকয়লার তন্দুর থেকে বায়ুদূষণ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু বড় বড় রেস্তোরাঁ এখন বৈদ্যুতিক তন্দুর ব্যবহার করে। কিন্তু রাস্তার স্টল বা পাড়ার ছোট কাবাবের দোকানের মালিকদের পুঁজি অল্প।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

পাড়ায় পাড়ায় এমন উনুনেই চলছে কাবাব তৈরি। নিজস্ব চিত্র

কাঠকয়লার উনুনে ঝলসানো হচ্ছে মাংসের টুকরো। কোনওটা হাড়-সহ, কোনওটা হাড় ছাড়া। কোনওটার গায়ে লাল মশলা, কোনওটার সবুজ, কোনওটা আবার দই-কাজুবাদাম বাটা-ক্রিমের সমাহারে সাদা মশলায় জারিত। নামের বাহারও নানা রকম। রেশমি, টিক্কা, মালাই, টেংরি কাবাব তো আছেই। সঙ্গে সুলতানি কাবাব, প্যারে কিংবা পাহাড়ি কাবাব। পাড়ায় পাড়ায় গত এক-দেড় বছরে গজিয়ে উঠেছে কাবাবের ছোট ছোট অসংখ্য স্টল। অফিসপাড়া বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট বা বসতপাড়া রানিকুঠি— বহু তল্লাটের মানুষেরই প্রিয় জলখাবার এখন এই কাবাব। জম্পেশ ঠান্ডায় স্বাদ যেন আরও খুলছে ঝলসানো মাংসের। কিন্তু এই রসনাতৃপ্তিই আবার বিষিয়ে তুলছে কলকাতার বাতাস।

Advertisement

এ নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা পুরসভা শীঘ্রই শহর জুড়ে অভিযানে নামতে চলেছে। যেখানে কাঠকয়লার তন্দুরের ক্ষতি নিয়ে দোকানদারদের বোঝানো হবে এবং গ্যাস বা বৈদ্যুতিক তন্দুরে তাঁদের কাবাব তৈরি করতে বলবে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ।

মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, কাঠকয়লার তন্দুর থেকে বায়ুদূষণ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু বড় বড় রেস্তোরাঁ এখন বৈদ্যুতিক তন্দুর ব্যবহার করে। কিন্তু রাস্তার স্টল বা পাড়ার ছোট কাবাবের দোকানের মালিকদের পুঁজি অল্প। সেখানে ছোট মাপের তন্দুরে কাঠকয়লার আগুনে মাংস ঝলসে কাবাব তৈরি চলছে। ‘‘বাতাসে এর বিষময় প্রভাবের কথা প্রচারে তুলে ধরা হবে। এখন কম দামেও ভাল বৈদ্যুতিক তন্দুর পাওয়া যায়। কাবাবের স্টলের মালিকদের আমরা সেগুলি ব্যবহার করার কথা বলব,’’ বলছেন অতীনবাবু।

Advertisement

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কয়লা, কাঠ বা কাঠকয়লার মতো কঠিন জ্বালানি খোলা জায়গায় পুড়ে এক দিকে বেঞ্জিন, বেন্‌জো আলফা পাইরিনের মতো গ্যাস বাতাসে তৈরি করছে। ওই সব গ্যাস থেকে ক্যানসারও হতে পারে। অন্য দিকে, কঠিন জ্বালানি পুড়ে তৈরি হওয়া সূক্ষ্ম (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম কণাও (পিএম ২.৫) বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পিএম ১০ সরাসরি শ্বাসযন্ত্রে ঢোকে আর পিএম ২.৫ সরাসরি ঢোকে ফুসফুসে। বায়ুদূষণের পিছনে কলকাতার হালফিলের এই কাবাব-সংস্কৃতির যথেষ্ট অবদান আছে বলে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন।

পিএম ১০-এর সহনমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে যেখানে ১০০ মাইক্রোগ্রাম এবং পিএম ২.৫-এর ৬০ মাইক্রোগ্রাম, সেখানে এখন শহরে পিএম ২.৫ থাকছে প্রায় ১৫০ আর পিএম ১০ থাকছে প্রায় ৩০০ মাইক্রোগ্রাম।

কলকাতা ও আশপাশের বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে বলে চিন্তিত রাজ্য সরকার। এ ব্যাপারে একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে, যাদের কাজ দূষণের অজানা উৎসগুলিকে চিহ্নিত করে সে সব নিয়ন্ত্রণ করা। কলকাতা পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ ওই কমিটির প্রধান।

কলকাতায় কাবাব বহু যুগ ধরেই পাওয়া যায়। এত দিন সে সব মিলত প্রধানত মোগলাই খানার রেস্তোরাঁয়। তবে গত এক-দেড় বছর ধরে পাড়ায় পাড়ায় কাবাবের ছোট ছোট স্টল হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘কাঠকয়লার ছাইও যত্রতত্র ফেলায় নাগরিকদের সমস্যা হচ্ছে। আর ধোঁয়া তো আছেই।’’

পুরসভা সূত্রে খবর, যে সব স্টলে কাঠকয়লার তন্দুরে মাংস সেঁকা হচ্ছে, সেগুলির প্রায় কোনওটিরই লাইসেন্স বা নথিভুক্তি নেই। অর্থাৎ, সেগুলি বেআইনি। তাই ওই স্টলগুলি বন্ধ করে দিতে পারে পুরসভা। তবে জনমুখী নীতির জন্য সেগুলি উচ্ছেদ করবে না তারা। আপাতত কয়লার তন্দুর থেকে তাদের বৈদ্যুতিক তন্দুরে আনাই লক্ষ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement