শহরের বহু মানুষ গাড়ি কিনলেও বাড়ির সামনে বা কোনও ফাঁকা জায়গায় সেটি রাখেন। ফাইল ছবি
কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন দফতরের মধ্যে গত দু’বছরে করোনার সময়ে সর্বাধিক আয় কমেছে গাড়ি পার্কিং বিভাগে। পুরসভা সূত্রের খবর, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই আয় কমার পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। তাই ফের এই বিভাগের আয় বাড়াতে একাধিক পদক্ষেপ করতে চলেছে পুরসভা। সূত্রের খবর, রাতে অবৈধ পার্কিং চিহ্নিত করার পাশাপাশি বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে পুরসভা। এ বিষয়ে পুরসভা কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালাবে।
পুরসভার পার্কিং দফতর সূত্রের খবর, শহরের বহু মানুষ গাড়ি কিনলেও বাড়ির সামনে বা কোনও ফাঁকা জায়গায় সেটি রাখেন। যদিও এই ব্যবস্থার অনুমোদন দেয় না পুরসভা। নিয়ম অনুযায়ী, পুরসভাকে মাসে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করা যেতে পারে। এর জন্য পুরসভা গাড়ির মালিককে একটি ‘স্টিকার’ সরবরাহ করে। কিন্তু পুরসভার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এই নিয়মের কেউ পরোয়া করেন না। ফলে পার্কিং বাবদ মাসে লক্ষাধিক টাকার কর হারাচ্ছে পুরসভা। সম্প্রতি পুরসভার মাসিক অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে সরব হন ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রূপক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তায় গ্যারাজহীন গাড়ির মালিকেরা রাতে রাস্তায় গাড়ি রেখে দিচ্ছেন। এই সমস্ত গাড়ি পার্কিংয়ের অনুমতি কি পুরসভার থেকে নেওয়া হয়?’’ জবাবে মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার সাফ জানান, পুরসভার অনুমতি ছাড়া কেউ রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করলে, তা বেআইনি। শহরের যেখানে যেখানে এই ব্যবস্থা চলছে, সেখানে পুরসভা সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। মেয়র পারিষদ এ বিষয়ে প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদেরও সতর্ক থাকতে বলেছেন। এই বিষয়ে কারও অভিযোগ থাকলে পুরসভাকে জানাতে বলেন তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী, পুর অনুমতি ছাড়াই রাস্তায় রাতে গাড়ি রাখলে চাকায় কাঁটা পরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, এক হাজার টাকা জরিমানাও নেওয়া হয়। পুরসভার পার্কিং দফতর সূত্রের খবর, আয় বাড়াতে পুজোর আগে থেকেই ওয়ার্ডভিত্তিক দল তৈরি করে রাতে অভিযানে নামা হবে। শহরের অনেক রাস্তায় বাসও এ ভাবে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রেও পুরসভার অনুমতির প্রয়োজন। পুরসভার পার্কিং দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দফতরে লোকবল কম থাকায় সব সময়ে রাতে অভিযানে নামা হয় না। কিন্তু এ বার থেকে ঠিক হয়েছে, নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মী-আধিকারিক নিয়েই রাতে নিয়মিত অভিযান চলবে। গাড়ির চাকায় কাঁটা পরানোর পাশাপাশি সেটির ছবি তুলে গাড়ির মালিককে নোটিস পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরসভাকে জরিমানা-সহ বকেয়া টাকা না দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলকাতা পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের সঙ্গেও পুরসভা কথা বলছে।’’
শহরে এখন প্রায় ৫৭০টি রাস্তায় পার্কিং চালু আছে। কার পার্কিং বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পার্কিংয়ে স্বচ্ছতা আনতে একাধিক বিষয়ের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। যেমন, পুরসভা মনোনীত পোশাক পরে ডিউটি করতে হবে পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। অভিযোগ, বহু রাস্তায় যতগুলি গাড়ি পার্কিং করার কথা, তার থেকেও বেশি করে অবৈধ ভাবে আয় করছে একাধিক সংস্থা। পুরসভা ইতিমধ্যেই এমন অভিযোগ পেয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীদের হাতেনাতে ধরে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কার পার্কিংয়ে স্বচ্ছতা ও নজরদারি বাড়াতে যখন-তখন অভিযানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আধিকারিকদের।’’