—প্রতীকী চিত্র।
শহর কলকাতায় ডেঙ্গির দাপট ভাবাচ্ছে কলকাতা পুরসভাকে। শীতের মরসুমে ডেঙ্গি
আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও গত কয়েক বছরে অগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় চিন্তিত পুর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বছরভর সচেনতনতামূলক প্রচার চালিয়েও তেমন কাজ না হওয়ায় পুরসভা এ বার নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে চলেছে।
কলকাতার ডেপুটি মেয়র তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ডেঙ্গি রুখতে বার বার মানুষকে সচেতন করা সত্ত্বেও না শুনলে বাধ্য হয়ে আইনি পথে যেতে হচ্ছে। জমা জলে ডেঙ্গির বাহক মশার লার্ভা মেলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নোটিস পাঠানো হয়েছে। যাঁরা নোটিস অগ্রাহ্য করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পুর আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।’’
পুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, জমা জলে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মেলায় ২০২১ সালে ৩৮৪৭ জনের বিরুদ্ধে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। দু’বার নোটিস পাঠিয়েও সাড়া না মেলায় এক জনের বিরুদ্ধে পুর আদালতে মামলা রুজু করা হয়। ২০২২ সালে নোটিস জারি করা হয়েছিল ৯৪৫৬ জনের বিরুদ্ধে। পুর আদালতে মামলা রুজু করা হয়েছিল ২৩ জনের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালে ১৩৭৩৬ জনের বিরুদ্ধে নোটিস জারি হয়েছে। চলতি বছরে ১৪৫ জনের বিরুদ্ধে পুর আদালতে মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ডেঙ্গি রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুরসভার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে এক হাজার টাকা থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করতে পারেন বিচারক। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘চলতি বছরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল জমে ডেঙ্গির বাহক মশার লার্ভা তো মিলেছেই। পাশাপাশি, ওই সব এলাকায় অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্তও হয়েছেন। নোটিস পেয়ে আইনভঙ্গকারীদের অনেকে এলাকা পরিষ্কার করেছেন। আবার দু’বার নোটিস পাঠিয়েও কাজ না হওয়ায় পুর আদালতে মামলা করা হয়েছে এবং আইনভঙ্গকারীদের জরিমানা দিতে হয়েছে।’’ পুরসভা জানাচ্ছে, ২০২২ সালে জরিমানা বাবদ তিন লক্ষ টাকা আদায় হয়েছিল। চলতি বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিমানা বাবদ আদায় হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা।
যে সব এলাকায় জমা জলে ডেঙ্গি মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে, সেখানে পুর আইন মেনে (৪৯৬এ কেএমসি অ্যাক্ট) দু’বার নোটিস পাঠানো হয়। এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, জল জমে থাকা পাত্র, আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য প্রথম নোটিস পাঠানো হয়। তার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এতে কাজ না হলে দ্বিতীয় নোটিস পাঠানো হয়। তার পরেও নোটিস অগ্রাহ্য করলে আইনভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে পুর আদালতে মামলা হয়। পুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, বাড়ির মালিক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও চলতি বছরে বিভিন্ন সরকারি অফিসেও একাধিক নোটিস পাঠানো হয়েছে।
চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের ঘটনা। কলকাতা পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের করিম বক্স রো এলাকার একটি সরকারি আবাসনের দশ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেখানকার ছাদে জলের ট্যাঙ্কের একাধিক ঢাকনা না থাকায় আবাসন দফতরের বিরুদ্ধে মামলা করে পুরসভা। ২৭ ডিসেম্বর ওই দফতরের সংশ্লিষ্ট এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজিরা দিতে হবে। বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পুর আইন অমান্য করায় স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু হয়েছিল। ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ওই মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে হবে।
পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘চলতি বছরে পুর আদালতে রেকর্ড সংখ্যক মামলা হয়েছে। আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে নোটিস পাঠানোর পাশাপাশি মামলা প্রয়োগে জোর দেওয়া হবে।’’