মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।
পুরসভার আয় বাড়াতে বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ের উপরে জোর দিতে চাইছেন কলকাতার নব নির্বাচিত মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শপথ নেওয়ার পরেই মেয়র নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিকর যাঁরা বকেয়া রেখেছেন, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করতে হবে। সেই মতো পুরসভার মূল্যায়ন ও সংগ্রহ (অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড কালেকশন) বিভাগের আধিকারিকেরা তা তৈরি করেছেন। সেই তালিকা অনুযায়ী, প্রায় তিন কোটি তিন লক্ষ টাকা সম্পত্তিকর বকেয়া রাখায় বুধবার রডন স্ট্রিটের একটি হোটেলে তালা ঝুলিয়ে এসেছেন পুরসভার আধিকারিকেরা। পুরসভা সূত্রের খবর, জানুয়ারি মাসে এমন অভিযান লাগাতার চালানো হবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তিকর বকেয়া রয়েছে, এমন প্রায় ২০টি ঠিকানায় তালা ঝোলানো হতে পারে জানুয়ারি মাসেই। এর জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি আগেভাগেই সেরে রাখছেন পুরসভার কর ও রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকেরা। এই মুহূর্তে কলকাতা পুরসভার বকেয়া সম্পত্তিকরের পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। মঙ্গলবার মেয়র হিসাবে শপথ নেওয়ার পরেই ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘যখন শপথ নিচ্ছি, ঠিক সেই সময়ে পুরসভার মাথায় সাতশো কোটি টাকার দেনা রয়েছে। পুরসভার আয় বাড়াতে সচেষ্ট থাকব।’’
পুর আধিকারিকেরা মনে করছেন, শপথ নেওয়ার পরেই বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে মেয়র যে রকম কঠোর মনোভাব দেখাতে শুরু করেছেন, তা অব্যাহত থাকলে আখেরে পুরসভারই লাভ। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিকর বকেয়া রাখায় প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন মধ্য কলকাতার একটি নামী হোটেলের জলের সংযোগ কেটে দিয়েছিলেন। তাঁর আমলে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে নজির গড়েছিল পুরসভা। সুব্রতবাবুর কঠোর
ও দৃঢ় মানসিকতার জন্যই পুরসভার আয় বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছিল।’’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তিকর না দেওয়ায় বুধবার সকালে রডন স্ট্রিটের একটি হোটেলে তালা ঝুলিয়ে দেন পুরসভার আধিকারিকেরা। পুরসভার কর ও রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সাল থেকে সম্পত্তিকর বকেয়া রেখেছিলেন। ২০১৪ সালে তাঁরা ৫৬ লক্ষ টাকার একটি চেক দিলেও তা বাউন্স করে। পরে একাধিক বার তাগাদা দেওয়া হলেও হোটেলের তরফে বকেয়া মেটানো হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা তালা ঝোলালাম।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা হাজার হাজার কোটি টাকা সম্পত্তিকর কী ভাবে আদায় করা যায়, তা নিয়ে কর ও রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত সেই সমস্ত ঠিকানার তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যেগুলির অনাদায়ী সম্পত্তিকরের পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি। এমন প্রায় ৫৫০টি ঠিকানা রয়েছে।
একই ভাবে ৫০ লক্ষ টাকা সম্পত্তিকর বকেয়া রয়েছে শহরের প্রায় ৬০০টি ঠিকানার। মেয়রের নির্দেশ মেনে ওই সমস্ত ঠিকানা ধরে জানুয়ারিতেই অভিযানে যাবে পুরসভা। প্রথমে নোটিস দিয়ে টাকা পরিশোধ করতে বলা হবে। তাতে কাজ না হলেই ঝোলানো হবে তালা।