ফাইল চিত্র।
এক দিনের কাজ শেষ করতে পাঁচ-ছ’দিন লেগে যায় বলে অভিযোগ। কলকাতা পুরসভার কাজে এমন দীর্ঘসূত্রিতার জন্য স্থায়ী, দক্ষ কর্মীর অভাবকেই দায়ী করছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতা পুরসভায় অনুমোদিত মোট পদের সংখ্যা ৪৬ হাজার। কিন্তু স্থায়ী দক্ষ কর্মীর সংখ্যা মেরেকেটে ১৮ হাজার। সেখানে কাজ চালাতে রয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার অস্থায়ী কর্মী। যার আঁচ এসে পড়ছে পুরসভার কোষাগারেও!
আগে কোনও পুরকর্মী অবসর নেওয়ার পরে পুরসভা নিজেই স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে পারত। কিন্তু বছর কয়েক আগে সেই নিয়মের বদল ঘটে। নতুন নিয়মানুযায়ী, কোনও স্থায়ী কর্মীর অবসর নেওয়ার দু’বছরের মধ্যে সেই পদে নতুন কর্মী নিয়োগ করতে হলে প্রথমে মেয়র পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর পরে তা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে এবং তার পরে অর্থ দফতরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন এলে তবেই ওই পদে নতুন নিয়োগ করতে পারবে পুরসভা। আবার, অবসরের দু’বছরের বেশি সময়ের পরে সেই পদে কর্মী নিয়োগ করতে অর্থ দফতরের অনুমোদনের পরে লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমতিও!
সূত্রের খবর, নানা কারণে ২০১১ সালের পর থেকেই পুরসভায় স্থায়ী কর্মীর নিয়োগ প্রায় বন্ধ। অথচ সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার অস্থায়ী কর্মী নিযুক্ত হয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দফতরে স্থায়ী দক্ষ কর্মী না থাকার ফলে কাজের গতি রুদ্ধ হচ্ছে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘এক জন অস্থায়ী কর্মীর ফাইল লেখা, কর্মপদ্ধতির তুলনায় চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া স্থায়ী কর্মীর কাজের মধ্যে ফারাক থাকবেই। দিনের পর দিন স্থায়ী কর্মী না থাকায় সেই সমস্যাটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন দফতর চাহিদা মতো অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করত। কিন্তু এক সময়ে তৎকালীন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ সেই নিয়োগে রাশ টানতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুরসভার পার্সোনেল দফতরের অনুমতি ছাড়া অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা যাবে না।
পুরসভা সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ও জঞ্জাল অপসারণ বিভাগেই অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। মাসখানেক আগে জঞ্জাল বিভাগে ৪৫৫৫ জন মজুর নিয়োগের জন্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমোদন আসে মাত্র ৮০০ জনের। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে শহরের বিভিন্ন শ্মশান ও কবরস্থানে সাব রেজিস্ট্রারের পদ বর্তমানে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। পার্সোনেল দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি ১৫ জন সাব রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য আবেদন করা হলেও মঞ্জুর হয়েছে মাত্র তিনটি পদ। স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কোনও ভাবে কাজ চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। অন্য কর্মীকে দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কাজ করাতে হচ্ছে।’’ ঊর্ধ্বতন আধিকারিকের তুলনায় নিচু স্তরের পদ বেশির ভাগ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার এক জন আধিকারিককেই একাধিক বিভাগের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে।
অন্য দিকে, স্থায়ী কর্মীদের বেতন রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে গেলেও অস্থায়ী কর্মীদের বেতন মেটাতে হয় পুরসভাকেই। রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘একেই অতিমারিতে রাজস্ব সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। তার উপরে বিপুল সংখ্যক অস্থায়ী কর্মীর বেতন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুরসভাকে।’’
যদিও কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার বলছেন, ‘‘স্থায়ী কর্মীর অভাবে পরিষেবার তো তেমন কোনও ঘাটতি হচ্ছে না! ধীরে ধীরে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। আগামী দিনেও নিয়োগ হবে।’’