Coronavirus

১৪০ টাকা মজুরিও সময়ে পাচ্ছেন না ১০০ দিনের কর্মীরা!

ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর রামপিয়ারি রামের দাবি, “কখনওই দেরি হয় না। মুখ্যমন্ত্রী এই পরিস্থিতিতেও মাসের পয়লা তারিখেই বেতন দেওয়ার কথা বলেছেন। এ বারই করোনা আর ঝড়ের কারণে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।”

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৩:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

লকডাউনে সময়মতো মজুরি পাচ্ছেন না পুরসভার একশো দিনের কর্মীরা। অভিযোগ এমনই। মজুরির পরিমাণ দিনে মাত্র ১৪০ টাকা। অনেকেই সংসার চালানোর পাশাপাশি আরও নানা দায়দায়িত্ব পালনের জন্য ওই টাকার উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল। সেটুকুও ঠিক সময়ে না-পেয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটছে তাঁদের।

Advertisement

শোভাবাজারের লক্ষ্মী কোলে, শিবানী দাস, যাদবপুরের তন্দ্রা সাহা বা পাটুলির সুবিমল মর্দনদের মতো কলকাতা পুরসভার একশো দিনের কর্মীদের দাবি, সংসার টানতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, লকডাউনের এই অনটনের পরিস্থিতিতে ১৪০ টাকা রোজের মজুরিও মিলছে না ঠিক সময়ে! অভিযোগ, মে মাসের মজুরি তাঁরা এখনও পাননি। জুনের মজুরির কাগজও পুরসভায় পাঠাতে টালবাহানা করছে বহু বরো অফিস। সূত্রের খবর, এ নিয়েই বুধবার তোলপাড় হয় কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর অন্তর্গত ন’টি ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈঠকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা বর্তমান পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ।

বৈঠকে উপস্থিত এক ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের অভিযোগ, “সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন একশো দিনের কর্মীরা। অথচ, ডেঙ্গির মরসুমে তো বটেই, এই করোনা অতিমারির সময়েও পুরসভার বড় ভরসা ওঁরাই। এ রকম চলতে থাকলে কাজ করানোই কঠিন হবে।” বরোর এগজিকিউটিভ হেলথ অফিসারকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি আরও বলেন, “অফিসারেরা বেতন পেয়ে যাচ্ছেন, অথচ একশো দিনের কর্মীদের টাকা আটকে যাচ্ছে! সময়ে কাগজপত্র না পাঠানোই এর কারণ।” ওই বরোর হেলথ অফিসারের অবশ্য দাবি, “এ মাসের পাঁচ তারিখেই আমরা কাগজপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। অন্য অনেক বরোর কাগজ হয়তো এখনও পুরসভায় যায়নি, তাই টাকা আটকে গিয়েছে।”

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু এক নম্বর বরোতেই নয়, শহরের ১৬টি বরোর সর্বত্রই স্বাস্থ্য বিভাগের কাজের সঙ্গে যুক্ত একশো দিনের কর্মীরা এখনও গত মাসের মজুরি পাননি। কিছু বরোয় আবার জঞ্জাল বা অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত একশো দিনের কর্মীদেরও একই অবস্থা। পুরসভা সূত্রের খবর, বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে শহরে এই মুহূর্তে প্রায় ১৪ হাজার একশো দিনের কর্মী আছেন। প্রতি মাসে ওই কর্মীদের নাম ধরে, তাঁরা কত দিন কাজ করেছেন, সেই হিসেব করা হয়। এর পরে সেই হিসেবে কে কত মজুরি পাবেন, সেই তালিকা বরো অফিস থেকে পাঠানো হয় পুরসভায়। সেখান থেকে তা যায় নবান্নে। এর পরেই মাসের শেষে টাকা পান সংশ্লিষ্ট একশো দিনের কর্মীরা। পুরসভার একশো দিনের কর্মীদের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা বর্তমানে ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর রামপিয়ারি রামের দাবি, “কখনওই দেরি হয় না। মুখ্যমন্ত্রী এই পরিস্থিতিতেও মাসের পয়লা তারিখেই বেতন দেওয়ার কথা বলেছেন। এ বারই করোনা আর ঝড়ের কারণে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।”

কংগ্রেস নেতা তথা কলকাতা পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর প্রকাশ উপাধ্যায়ের অবশ্য অভিযোগ, “কোনও মাসেই একশো দিনের কর্মীদের যথাসময়ে মজুরি দেয় না পুরসভা। গত মাস থেকে তো আর টাকাই আসেনি। ভুললে চলবে না, যাঁরা দিন আনেন দিন খান, তাঁরাই একশো দিনের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। গৃহস্থের বাড়িতে কত রকমের বঞ্চনা তাঁদের সহ্য করতে হয়, তা আমরা সকলেই জানি। ওঁদের সম্মান দেখিয়েই পয়লা তারিখে টাকা দেওয়া উচিত।”

এত জনের মজুরি আটকে কেন? প্রশ্ন শুনে বিরক্ত স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতীনবাবু বললেন, “সবাই সব পাবেন। অত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement