এমনই হতশ্রী দশা পার্ক সার্কাস বাজারের। —নিজস্ব চিত্র।
‘বিপজ্জনক’ পার্ক সার্কাস বাজারকে পুরোপুরি ভেঙে এ বার সংস্কারের কাজে হাত দিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভা নিজের উদ্যোগেই ওই বাজার সংস্কারের কাজে হাত দেবে। পুরসভা সূত্রের খবর, পুরনো বাজার ভেঙে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক মানের নতুন দোতলা বাজার নির্মাণের প্রস্তাব আগামী কাল, শুক্রবার মেয়র পরিষদের বৈঠকে গৃহীত হওয়ার কথা।
বুধবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আপাতত দোতলা বাজার তৈরি করা হলেও আগামী দিনে ওই ভবন আটতলা করা হবে। দোতলা থেকে আটতলা পর্যন্ত অংশ পুরসভা নিলামে বিক্রি করবে। বেসমেন্টে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকবে।’’
উল্লেখ্য, পার্ক সার্কাস বাজার সংস্কার নিয়ে টানাপড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। গত কয়েক বছর ধরে ওই বাজার সংস্কার করার জন্য সেখানকার ব্যবসায়ীদের পার্ক সার্কাস ময়দান সংলগ্ন এলাকায় সরতে বলছিল পুরসভা। কিন্তু সেই ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীরা রাজি না হওয়ায় বাজার সংস্কার ঘিরে জটিলতার সৃষ্টি হয়। ওই বাজারের ব্যবসায়ী সমিতি বছরখানেক আগে বাজারের সামনে রীতিমতো সভা করে জানিয়েছিল, কোনও ভাবেই সরবে না তারা।
বাম আমলে বিকাশ ভট্টাচার্য মেয়র থাকাকালীন এই বাজার সংস্কারের জন্য একটি বড় বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল পুরসভা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের জেরে সেই চুক্তি বাতিল হয়। সেই ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে বর্তমান পুর বোর্ড বাজার সংস্কারের জন্য কোনও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে না বলেই পুরসভার সূত্রের খবর। বর্তমানে পার্ক সার্কাস বাজারের অবস্থা এতটাই বেহাল যে, বছর দুয়েক আগে বাজারের মধ্যে আচমকা চাঙড় খসে পড়ায় এক ক্রেতা আহত হন। পরে বাজার পরিদর্শন করে পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান যে, পুরনো ভবনটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলে তা আবার তৈরি করতে হবে। এর পরেই পুরসভা বাজারটি পুরোপুরি ভেঙে ফের তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রায় সাত বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত ওই বাজারে বর্তমানে ৩৫০টি দোকান রয়েছে। পুরসভার তরফে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের পার্ক সার্কাস ময়দান লাগোয়া এলাকায় অস্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু বাজার সমিতি পুরসভার সেই সিদ্ধান্তে নারাজ। ‘পার্ক সার্কাস মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক গিরীন্দ্রচন্দ্র পালের অভিযোগ, ‘‘করোনা, লকডাউনের পরে ছোট ব্যবসায়ীদের কাজে মন্দা চলছে। অনলাইনে কেনাকেটার জেরে বাজারের দোকানিরা ধুঁকছেন। এই অবস্থায় বাজারটি পার্ক সার্কাস ময়দানের মতো শুনশান এলাকায় চলে গেলে বিক্রিবাটা কিছুই হবে না।’’ তবে এ দিন মেয়র বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে না সরলে ওই বাজার সংস্কার করা সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে পার্ক সার্কাস বাজারের বাড়িটির দশা বিপজ্জনক। পুনর্বাসনের জন্য পার্ক সার্কাস ময়দান সংলগ্ন এলাকা ছাড়া আর ফাঁকা জায়গা নেই।’’