Cyclone Jawad

KMC Election 2021: ভোটের আগেই পরীক্ষার মুখে প্রার্থীরা

আবহাওয়াবিদেরা অবশ্য শুনিয়ে রেখেছেন, শহরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সে ভাবে না-ও পড়তে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২৪
Share:

ফাইল চিত্র।

কেউ স্থির করে রেখেছেন, সিইএসসি-পুরসভার দল নিয়ে বরো অফিসেই রাত কাটাবেন। কেউ আবার দফায় দফায় ফোন করছেন পুর কমিশনারকে। কেউ গাছ কাটার যন্ত্র আর বাড়তি পাম্প নিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার পুরনো ওয়ার্ড ছেড়ে নতুন ওয়ার্ডের ভোটপ্রার্থী হওয়ায় দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে শুক্রবারই সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক সেরে রেখেছেন।

Advertisement

ঘূর্ণিঝড় জ়ওয়াদ আছড়ে পড়ার আগে কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীদের তৎপরতার ছবিটা এখন এমনই। কারণ, জ়ওয়াদের জেরেই এই মুহূর্তে পুর ভোটের আগে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে তাঁদের। অনেকেই মনে করছেন, এই দুর্যোগে যে যেমন কাজ করবেন, তেমনই ফলাফল মিলতে পারে পুর ভোটে। বহু এলাকার বাসিন্দাদের আবার দাবি, এটা উপলব্ধি করেই গত দু’দিনে প্রার্থীদের মধ্যে কাজ ‘দেখানোর’ তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।

কিন্তু এর পরেও শহর কলকাতার জলভাসি ছবিটা বদলাবে কি?

Advertisement

আবহাওয়াবিদেরা অবশ্য শুনিয়ে রেখেছেন, শহরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সে ভাবে না-ও পড়তে পারে। কিন্তু মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় ফণী, আমপান বা ইয়াস ছাড়াও পুজোর আগে টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ জল-যন্ত্রণার ছবি দেখেছে শহর। কয়েক পশলা বৃষ্টিতেই উত্তরের আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, কলেজ স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সুকিয়া স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে শুরু করে দক্ষিণের বেহালা, খিদিরপুর, দেশপ্রিয় পার্ক, বালিগঞ্জ, যাদবপুর, বাইপাস সংলগ্ন নয়াবাদ, মুকুন্দপুরের মতো একাধিক এলাকায় বেশ কয়েক দিন জল জমে ছিল বলে অভিযোগ। একই ছবি দেখা গিয়েছিল বন্দর এলাকার ১৩৮, ১৩৯, ১৪০, ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ জায়গাতেও। সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডের আয়ুবনগর, ওয়ারিশনগর, উঁচামাঠ, নীচামাঠ, ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বদরতলা লেনের বাসিন্দাদের। ৩৯, ৪০ এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার খোলা নর্দমার জলের সঙ্গে বৃষ্টির জল মিশে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে।

এর সঙ্গে রয়েছে ঝড়-বৃষ্টি হলেই শহরে গাছ ভাঙা বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও। শুধুমাত্র আমপানের রাতেই শহরে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছিল। পরের কয়েক দিনে আরও কয়েক জনের মৃত্যুর খবর সামনে আসে। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত দু’বছরে ঝড়-বৃষ্টির রাতের বিপর্যয়ে শহরে অন্তত ৮৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ফলে পুরকর্তাদের পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়েও।

এর সঙ্গেই রয়েছে শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তারের জট এবং পুরনো বিপজ্জনক বাড়ির সমস্যা, যা এই সব বিপদকে আরও বাড়িয়ে দেয়। বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর তথা বাম প্রার্থী করুণা সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘বিদ্যুতের তার এবং পুরনো বাড়িগুলিকে নিয়েই ভয়। কমিউনিটি হল আর পাড়ার ক্লাবগুলিকে তৈরি রেখেছি। ভোট পরে হবে। এই মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই আগে।’’ আর এক ভোটপ্রার্থী, তৃণমূলের দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘প্রার্থী হিসাবে তো কিছু বলতে পারি না। তবে ঝড়ে গাছ পড়লে সকলের আগে এগিয়ে যাব। এখন সেটাই বড় কাজ।’’

তৃণমূল প্রার্থী অতীন ঘোষ যদিও বললেন, ‘‘মানুষ সব দেখেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা সর্বতোভাবে প্রস্তুত। মানুষ এই প্রস্তুতিও দেখবেন। নিজের ওয়ার্ডেই বরো অফিস রয়েছে। সেখানে পুরসভার সমস্ত রকম দল মজুত থাকবে। জল জমলে বা গাছ পড়লে দ্রুত পৌঁছে যাবে সেই পুর দল। সিইএসসি-র দলও থাকছে বরো অফিসে।’’ নিকাশি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত, পুর প্রশাসকমণ্ডলীর বিদায়ী সদস্য তথা পুর ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তারক সিংহের দাবি, ‘‘ইতিমধ্যেই পুর কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। পুরকর্মীদের ছুটি বাতিল হয়েছে। যাদবপুর, বেহালায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। কলকাতার নাগরিক হিসাবে যিনি এই দুর্যোগের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবেন, মানুষও তাঁর পাশে দাঁড়াবেন।’’ কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশ উপাধ্যায় এবং বাম প্রার্থী চয়ন ভট্টাচার্য যদিও বললেন, ‘‘পুরোটাই পুরসভার করার কথা। প্রার্থীদের এখানে কোনও ভূমিকা থাকার কথাই নয়। কিন্তু তবু থাকে। কারণ বিরোধী হিসাবে আমরা জানি, পুরসভা বছরভর বহু কাজই করে না। তাই নিজেদের দল নিয়ে আমাদেরই ঝাঁপাতে হয়। এই ঝড়-বৃষ্টিতেও আমরা নিজেদের দল নিয়েই ঝাঁপাচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement