প্রদেশ কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রকাশ নিজস্ব চিত্র।
বিগত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে নিজেই সওয়াল করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কলকাতার পরে রাজ্যের অন্যান্য পুরসভার ভোটের ক্ষেত্রেও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পক্ষে সওয়াল করতে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, রাজ্য পুলিশকে দিয়ে স্থানীয় স্তরের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ ভাবে সম্ভব নয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনও রাজ্য সরকারের ‘ইচ্ছা’র বাইরে পদক্ষেপ করবে না।
কলকাতার পুরসভার ভোট পুলিশের নিরাপত্তাতেই হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুর বক্তব্য, সীমিত ক্ষমতায় তাঁরা কলকাতায় লড়াই করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, তাঁদের ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে, প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে, কোথাও ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি জানিয়ে শুক্রবার কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছেন অধীরবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের রথী-মহারথীরা বলছেন, ভোটে কেউ বাধা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তৃণমূল স্তরের নেতৃত্ব প্রচারে বাধা দিতে শুরু করেছেন। এখন পুরভোট কেমন হবে, পুরোপুরি দিদির মন-মর্জির উপরে নির্ভর করছে!’’ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব অবশ্য বাধা দেওয়া বা হিংসার অভিযোগ ‘কষ্টকল্পনা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ দিন গিরীশ পার্ক, বেলগাছিয়া, বেনিয়াপুকুর এলাকায় পুরভোটের প্রচারে গিয়েছিলেন। মাঝে বিধান ভবনে কলকাতা পুরসভার জন্য কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রকাশ করতে এসে তিনি সরাসরিই বলেন, রাজ্য পুলিশের উপরে তাঁদের কোনও আস্থা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেই সব ঠিক থাকবে, তার কোনও মানে নেই। তবু আধা-সামরিক বাহিনী থাকলে অন্তত ৩০% কাজ হওয়ার জায়গা থাকে। পঞ্চায়েত ভোটে যেমন করেছিলাম, এর পরের পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আমরা আবার আদালতে যাব।’’ তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘বিরোধীরা একটা অভিযোগ করেছে কোথাও? কমিশনে গিয়েছে? আসলে শস্তায় বাজিমাত করতে চাইছেন বিরোধী নেতারা। কে কী ভাবে মানুষের সমর্থন পেতে চাইবেন, তা তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু এই নির্বাচনে হিংসার অভিযোগ কষ্টকল্পনা মাত্র!’’
জলনিকাশি ব্যবস্থা, বস্তি উন্নয়ন ও হকার পুনর্বাসনে নজর দেওয়ার কথা বলে ‘আমার কলকাতার ইস্তাহার’ এ দিন প্রকাশ্যে এনেছে কংগ্রেস। অনুষ্ঠানে ছিলেন এআইসিসি-র সহ-পর্যবেক্ষক বি পি সিংহ, পুরভোটের পর্যবেক্ষক কমিটির চেয়ারম্যান নেপাল মাহাতো, অসিত মিত্র, প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক আলম প্রমুখ। ইস্তাহার প্রসঙ্গে অধীরবাবুর মন্তব্য, ‘‘দিদি কলকাতাকে লন্ডন বানিয়েছেন। কিন্তু সেই লন্ডন এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয়ে যায়! এটা পুরসভার ব্যর্থতা নয়? আমরা লন্ডন নয়, কলকাতা ফেরত চাই।’’ দক্ষিণের ৮৯, ৯০ ওয়ার্ডে এ দিনই প্রার্থীদের নিয়ে প্রচারে বেরিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় ও স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা।
কলকাতায় এ বার কংগ্রেস ও বামেরা নিজেদের শক্তিতে অধিকাংশ ওয়ার্ডে লড়াই করছে। আবার কিছু ওয়ার্ডে বাম ও কংগ্রেস পরস্পরকে সমর্থন করছে। একই পুরসভায় এই দু’রকম অবস্থান কি জনমানসে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করছে না? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির জবাব, ‘‘আমাদের কিছু করার ছিল না। যেখানে লড়াই করার ক্ষমতা আছে, সেখানেই আমরা প্রার্থী দিয়েছি। সেই ২০১৬ সাল থেকে আমাদের অবস্থান একই আছে। আমরা বামেদের সঙ্গে জোট ভাঙিনি। ওঁরাই খাপছাড়া অবস্থান নিয়ে কখনও জোট করছেন না, কোথাও আবার সমঝোতা করছেন!’’ এই প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কলকাতার পুরভোটে যা-ই হোক না কেন, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ার স্পষ্ট মনোভাব থাকলে পথ চলতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’