কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভা পরিচালিত স্কুলগুলিতে শৌচাগার-দুর্নীতি কাণ্ডে পুরসভার শিক্ষা বিভাগের যে প্রাক্তন চার আধিকারিক ও কর্মীর দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, চলতি সপ্তাহেই তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করবেন পুর কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, চলতি মাসের শেষেই পুরসভার ‘ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস সেল’-এ অভিযুক্তদের শুনানি শুরু হবে। শুনানির সময়ে বিচারকের ভূমিকায় থাকবেন পুরসভারই এক পদস্থ আধিকারিক।
পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘২০১৭-২০২০ সালের মধ্যে পুরসভা পরিচালিত ৫০টি
বিদ্যালয়ে শৌচাগার সংস্কারের নামে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা গরমিলের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অভিযুক্তেরা যাতে আইনের ফাঁক গলে পার না পান, সে জন্য খুঁটিয়ে তদন্ত চলছে। মেয়র স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। সেই মতোই আমরা এগোচ্ছি।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, বছর ছয়েক আগে একাধিক পুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা শৌচাগার-দুর্নীতির বিষয়টি সম্পর্কে পুরসভার শিক্ষা বিভাগের পদস্থ কর্তাদের অবগত করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, তা সত্ত্বেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষকদের অভিযোগ ছিল, খরচের বিলে তাঁদের দিয়ে জোর করে সই করিয়ে ঠিকাদারদের টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বাম প্রভাবিত ‘কলকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’-এর সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শৌচাগার সংস্কারের নামে পুকুর চুরি হয়েছিল। আমরা তদানীন্তন যুগ্ম পুর কমিশনার (শিক্ষা)-কে সব জানালেও কাজ হয়নি। আমরা এর বিহিত চাই।’’
আরও অভিযোগ, যে সব ঠিকাদারকে টাকা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা শিক্ষা বিভাগের তৎকালীন মেয়র পারিষদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের এলাকার (বেহালা) বাসিন্দা। যদিও অভিজিৎকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। মাস আটেক আগে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মতো পুরসভার শিক্ষা বিভাগ আগেই বিভাগীয় প্রাক্তন চিফ ম্যানেজার, তদানীন্তন ম্যানেজার, এক পুর আধিকারিক এবং এক কর্মীকে কারণ দর্শাতে বলে। তাঁরা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় পুরসভা চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে।
শুক্রবার পুরসভার পার্সোনেল দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আশা করছি, চলতি সপ্তাহেই চার জনকে চার্জশিটের কপি ধরাতে পারব। এই মাসের শেষ সপ্তাহে শুনানি শুরু হবে।’’ শুনানিতে সাক্ষী হিসাবে ডাকা হবে পুর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এক পুর আধিকারিক জানান, শুনানি প্রক্রিয়া তিন মাসের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘যে ভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঠিকাদারদের বিল ধরানো হয়েছে, তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। শুনানিতে অভিযুক্তেরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন পুর কর্তৃপক্ষ।’’